ঢাকা, সোমবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তথ্যের অপব্যবহার করে কেউ যেন সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে: তথ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
তথ্যের অপব্যবহার করে কেউ যেন সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে: তথ্যমন্ত্রী তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ

ঢাকা: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে যে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করেছে তা অপব্যবহার করে কেউ যেন সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশন ভবনে ‘তথ্যের অবাধ প্রবাহে ইন্টারনেটের গুরুত্ব’প্রতিপাদ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং তার সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাস করে। অবাধ তথ্য প্রবাহ মানুষের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে, গণতন্ত্র, বহুমাত্রিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংহত হয়। সে জন্য আমরা তথ্য অধিকার আইন পাস করেছি এবং আজকে সত্যিকার অর্থে দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছে।

সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বাড়ানো রোধে তথ্য অধিকার প্রয়োগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়। আমি সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাবো যারা এ সিন্ডিকেট করে তাদের সম্পর্কে আপনারা জানেন। পাইকারি বিক্রেতা কত টাকা দিয়ে পণ্য কিনেছেন, তার উৎপাদন খরচ কত এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কত টাকায় বিক্রি করছেন এবং সেখান থেকে তারা এবং খুচরা বিক্রেতারা কত শতাংশ মুনাফা অর্জন করছেন। অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় সময়ে সময়ে দ্রব্যমূল্য অকারণে বেড়ে যায়। এখানে যদি স্বচ্ছতা আসে, এ বিষয়গুলো আরও ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে আসে তাহলে কেউ এটি করতে পারবে না।

এনজিও বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক এনজিও সময়ে সময়ে জাতিকে জ্ঞান দেয়। এ এনজিওগুলো কোথায় টাকা পায় তারা কত টাকা কিভাবে কোন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে, ট্যাক্স দেয় কি না সেটিও জানা প্রয়োজন। শুধুমাত্র সরকারি দপ্তরে গিয়ে তথ্য পাওয়ার জন্য দেন-দরবার বা ভিন্ন উপায় অবলম্বন করা এবং শুধুমাত্র সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সেগুলোকে গণমাধ্যমে আনা সমীচীন নয়।

নাগরিক সমাজের প্রসঙ্গ টেনে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিস্তৃত গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নাগরিক সমাজ একটু বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু নাগরিক সমাজের নাম করে যারা বিভিন্ন সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে, জাতির স্বার্থ রক্ষা না কি যাদের কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছে, অনুদান পাচ্ছে তাদের স্বার্থ রক্ষা করছে, সেই তথ্যও জানা প্রয়োজন। সুধিমন্ডলী ও সাংবাদিকদের অনুরোধ করবো সে দিকে দৃষ্টিপাত করার জন্য।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে পৃথিবীর পুরো ক্যানভাসটাই বদলে গেছে, মানুষের অভ্যাসও বদলে গেছে। দেশে ৮ কোটির বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। এ মাধ্যম আমাদের যোগাযোগের অবাধ সুযোগ যেমন করে দিয়েছে, একই সঙ্গে রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা, সমাজে অস্থিতিশীলতা, গুজব রটানো, ভুল সংবাদ মিথ্যা সংবাদ, উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ ছড়ানোর বড় প্লাটফর্ম তৈরি করেছে।

ড.হাছান বলেন, গত এশিয়া মিডিয়া সামিটে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমাজে অস্থিরতা মোকাবিলা। বছরখানেক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সার্ভেতে দেখা গেছে ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষ মনে করে যে সমাজে যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হয়, এবং তৎপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। এ প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিপাত করা দরকার। কারণ এ দেশেও পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে নরবলি দেওয়াসহ নানা ধরণের গুজব, এরপর ছেলে ধরা গুজব ছড়ানোর পর গণপিটুনিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তথ্য কমিশন এ ক্ষেত্রে কি করতে পারে, সেটি নিয়েও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জমির এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বক্তব্য রাখেন।  

আলোচনায় অংশ নেন তথ্য কমিশনার শহিদুল আলম ঝিনুক ও মাসুদা ভাট্টি।  

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, সাবেক তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার এবং মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট সংস্থার এবং তথ্য অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় যোগ দেন।

প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য অধিকার দিবস পালনের ধারাবাহিকতায় এ দিনের সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালের প্রথম অধিবেশনে ২৯ মার্চ তথ্য অধিকার আইন পাস হওয়ার পর থেকে গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে এ আইনের আওতায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৮টি আবেদন জমা পড়েছে এবং এর ৯৬.৭৩ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। আর তথ্য কমিশনে এ পর্যন্ত দায়ের করা ৫ হাজার ৩৬০টি অভিযোগের মধ্যে ৫ হাজার ২৭১টি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০৯ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৬০ লাখ যা এখন প্রায় ১২ কোটির কাছাকাছি এবং দেশে ব্যবহৃত মোবাইল সিমের সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭,২০২৩
জিসিজি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।