জয়পুরহাট: দ্বিতীয় স্ত্রীর কাণ্ডে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে তাকে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলামকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) পদে নিয়োগ করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য , ২৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে স্ত্রীর অধিকার পেতে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিকুল ইসলামের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন জিনাত আরা খাতুন নামের এক শিক্ষিকা। নিজেকে দিনাজপুর কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক বলে জানান জিনাত।
ঘটনার দিন বিকেল প্রায় চারটার দিকে জিনাত আরা খাতুন সন্তান ও পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও আরিফুল ইসলামের কার্যালয়ে যান। এরপর সেখানে শুরু হয় হইচই। ইউএনও তার মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে আনসার সদস্যদের দিয়ে হেনস্তা করে বাইরে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন জিনাত আরা।
এরপর বাধ্য হয়ে জিনাত আরা ইউএনওর কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে বাস থামিয়ে অনশন শুরু করেন। সেখানে এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, দিনাজপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে থাকাকালীন সদরের উপশহর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে শিক্ষিকা জিনাত আরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ইউএনও আরিফুল ইসলামের। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে রেজিস্ট্রি মূল্যে জিনাতের সঙ্গে বিয়ে হয় ইউএনও আরিফুলের। অথচ ইউএনও ছিলেন বিবাহিত। প্রথম স্ত্রীর পরিচয় গোপন রেখেই জিনাতকে বিয়ে করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মোবাইলফোনে ইউএনও আরিফুলের দুই স্ত্রী ঝগড়া করেন।
এরপর বুধবার বিকেলে দ্বিতীয় স্ত্রী জিনাত আরা তার ১৭ মাসের সন্তানকে নিয়ে ইউএনও বাসায় গেলে এক পর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় আনসার সদস্যকে ডেকে এনে দ্বিতীয় স্ত্রী জিনাতকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ইএনও। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জিনাত তার সন্তানকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের সড়কে বসে পড়ে। এ সময় উৎসুক জনতা সড়কে ভিড় করলে দুপাশে অনেক যানবাহন আটকা পড়ে।
এক পর্যায়ে আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন্দ তার অফিসের নারী ও পুরুষ কর্মচারী ও স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী জোরপূর্বক ইউএনওর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যেতে চায়। ইউএনওর স্ত্রী যেতে না চাইলে তাকে টেনেহিঁচড়ে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন জিনাত।
এরপর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে বসিয়ে জিনাতকে জানানো হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও তাকে তালাক দিয়েছেন। এমন খবর জানতে পেরে সন্ধ্যার পর জিনাত তার সন্তানকে নিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।
জিনাত আরা খাতুনের দাবি করে বলেন, জমি খারিজ করতে গিয়ে এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে আমাদের বিয়ে হয়। চলতি মাসের ২৪ সেপ্টেম্বর আরিফুল আমাকে একতরফা তালাক দেন সেটি আমি জানতাম না। আমি যোগাযোগের চেষ্টা করলে সব মাধ্যম থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি। বাধ্য হয়ে আক্কেলপুর আরিফুলের বাসভবনে গেলে আমাকে নানা অপদস্থ, হেনস্তা করেন তিনি এবং মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দের। তখন আমি রাস্তায় বসে অনশন শুরু করি। এরপর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই আমাকে টেনেহিঁচড়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
ইউএনও আরিফুল তার আরেকটি সন্তান গর্ভে নষ্ট করতে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ করেছেন জিনাত আরা।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম মোবাইলফোনে বলেন, তাকে (দ্বিতীয় স্ত্রী জিনাত) তালাক দেওয়া হয়েছে। আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটি একটি পারিবারিক বিষয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩
এসএএইচ