ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিবাদ রাজনীতিবিদরা করবেন।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস অয়োজিত ভিসানীতির নামে সংবাদমাধ্যমে মার্কিন চাপের প্রতিবাদে সাংবাদিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ চলে সংবিধানের ওপর। তবে রাজনীতির প্রয়োজনে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন হয়। আজকেও রাজনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। তবে একটি স্বাধীন দেশের ওপর বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ মানি না, মানব না। আমেরিকা বন্ধুর আচরণের বিপরীতে প্রভুর আচরণ করতে চায়। আমরা সেটি মানব না। তারা ভিসানীতির ভয় দেখিয়ে অযাচিত হুমকি দেবেন, সেটা মেনে নিতে পারি না।
তিনি বলেন, আমরা কি এদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র হতে দেব না, আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হোক তা কি হতে দেব না, আমাদের গণমাধ্যম স্বাধীন হোক তা কি হতে দেব না? আমরা শুধু এই কথাটিই বলতে চাই, আমরা যে কাজগুলো করতে চাই সেটি আমরা নিজেরাই করতে চাই। আমাদের নিজের শক্তি দিয়ে, স্বাধীনচেতা বিবেক নিয়ে আমরা সেটি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কারো হুমকিতে কারো ধমকে কারো চাপের মুখে আমরা করতে চাই না।
ইকবাল সোবহান বলেন, গণমাধ্যম কারও পক্ষেও নয়, কারো বিপক্ষেও নয়। গণমাধ্যম বিরোধী দলের পক্ষেও নয় বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও নয়। গণমাধ্যম সত্যের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, দেশের অগ্রযাত্রার পক্ষে। আমরা অতীতে এটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। সামরিক সরকার এসেছে আমাদের ওপর চাপ দিয়েছে, স্বৈরাচার সরকার এসেছে আমাদের ওপর চাপ দিয়েছে। আমাদের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক, সম্পাদক, আমাদের যারা কর্মী তারা বুকের রক্ত দিয়েও এই চক্ষু রাঙানোকে উপেক্ষা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আজকের এই সমাবেশ থেকেও আমরা এই প্রত্যয় ঘোষণা করতে চাই যে, আমরা কারো চক্ষু রাঙানোর কাছে মাথা নত করব না। আমাদের দেশের কোনো শক্তিও যদি আমাদের মাথা নত করতে বাধ্য করতে চায়, আমরা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। পাশাপাশি কোনো বিদেশি শক্তি সে পরাশক্তিই হোক আর যত বড় শক্তি হোক, তারাও যদি আমাদের ওপরে তাদের চোখ রাঙানি দিয়ে এখানে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে চায়, আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে হলেও তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ করব।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত গণমাধ্যমের দেশ। সেখানেও সাংবাদিক নির্যাতন হয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য তার দেশেরই মুক্ত গণমাধ্যমের নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। পিটার হাসের বক্তব্য পরোক্ষাভাবে গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন গণমাধ্যমের যে নীতি তার বরখেলাপ। পেশার সম্মান রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরে ২৭ হাজার ভিসা দিয়ে থাকে। এরমধ্যে ১০ হাজার ভিসা পায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। তাদের তো ভিসানীতি রয়েছেই, আবার নতুন করে আবার যে ভিসানীতি, তা আমাদের ভয় প্রদর্শন করার জন্যই। আমরা কোনোভাবেই আমাদের ওপর কারো চোখ রাঙানো স্বীকার করবো না।
ডিইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মানিক লাল ঘোষ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনদিনই বাংলাদেশের বন্ধু ছিল না। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবস্থান আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। ভিসানীতির নামে গণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগ এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তমনা মানুষ উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকেই জানান দিচ্ছে। তাদের এই নীতি সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে উৎসাহিত করবে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে তাদের এই হস্তক্ষেপ গনতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে নষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দ্য ডেইলি স্টেটের জয়েন্ট এডিটর ওবায়দুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সমাবেশে বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম।
এম শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস’র চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্টস’র মহাসচিব শাহীন বাবু, সাংবাদিক নেতা লায়েক উজ্জমান, সিনিয়র সাংবাদিক আজমল হক হেলাল, আবু সাঈদ, সোহেল আমহেদ সোহেল, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক, রাজু আহমেদ, আল মাসুদ নয়ন, গোলাম মুজতবা ধ্রুব প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২৩
টিএ/এমজেএফ