ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৩
বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু হাবিবুর রহমান

বগুড়া: বগুড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে হাবিবুর রহমান (৩৫) নামের এক আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৩ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।



হাবিবুর রহমান বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বাবলুর ছেলে। তিনি বগুড়া বার সমিতির সিনিয়র সদস্য মঞ্জুরুল হকের সহকারী ছিলেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে আদালতের বাইরে থেকে হাবিবুর রহমানকে আটক করা হয়। পরে তিন অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের নেওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় আইনজীবী সহকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। নিহতের স্বজন ও তার সহকর্মীদের অভিযোগ, তাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ।

বগুড়া ডিবি পুলিশ কার্যালয় সূত্র জানান, ১০ বছর আগে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামে বিপুল নামে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হাবিবুর রহমান ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। নিহত কিশোরের সৎ মা খুকি বেগম ওই হত্যা মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। কিন্তু সাক্ষ্য দেওয়া জন্য আদালতের ধার্য তারিখের আগেই ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর ৪ আগস্ট খুকির একটি পা বিহীন মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর মঙ্গলবার মনোয়ারা বেগম নামে প্রতিবেশী এক নারীর বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে খুকি বেগমের খণ্ডিত পা উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মনোয়ারা বেগমকে আটক করা হলে তিনি খুকিকে হত্যায় হাবিবের জড়িত থাকার তথ্য দিয়ে জানান, তার সামনেই হাবিবসহ কয়েকজন খুকিকে হত্যা করে। মনোয়ারা বেগমের দেওয়া তথ্যানুযায়ী হাবিবকে মঙ্গলবার বিকেলে আটক করা হয়। পরে ডিবি অফিসে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মনোয়ারা বেগমের মুখোমুখি করা হলে হাবিবুর বুকে ব্যথার কথা বলেন। পরে তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হাবিবুরের মামা বগুড়া বার সমিতির সিনিয়র সদস্য মঞ্জুরুল হক জানান, হাবিবুর তার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। বিকেল ৫টার দিকে তিনি তার সহকর্মী রাকিবুলকে নিয়ে আদালত থেকে বের হয়ে যান। ফটক দিয়ে বের হওয়ার পর পরই একদল লোক তাদের গতিরোধ করে এবং হাবিবুর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। পরে খোঁজ করে জানতে পারি যারা হাবিবুরকে তুলে নিয়ে গেছেন তারা ডিবির সদস্য। এরপর রাত ৯টার দিকে খবর আছে আমার ভাগ্নে হাবিবুর মারা গেছেন এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার মরদেহ রাখা হয়েছে।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্র জানান, সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাবিবুরকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তখন তিনি অচেতন ছিলেন। পরে তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছিলেন যে, হাবিবুর রহমান অচেতন হওয়ার আগে বুকে ব্যথার কথা বলেছিলেন। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা চেষ্টা করেও হাবিবুরের জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

নিহত হাবিবুরের স্বজন এবং সহকর্মীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার জানান, তাকে কোন টর্চার করা হয়নি। তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এমন সুযোগও তো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডিবি সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপরেও এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৩
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।