ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মাসে ৪৫ লাখ ইয়াবা আনতেন ইউপি সদস্য বাবুল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
‘মাসে ৪৫ লাখ ইয়াবা আনতেন ইউপি সদস্য বাবুল’

ঢাকা: ২০২১ সালে কক্সবাজারের টেকনাফে পালংখালি ইউনিয়নে ইউপি পরিষদ নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচিত হন জাফরুল ইসলাম ওরফে বাবুল। তার নেতৃত্বেই টেকনাফে গড়ে উঠে শীর্ষ মাদক সিন্ডিকেট।

মাসে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ ইয়াবা নিয়ে আসতো এ সিন্ডিকেট। এরপর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেসব ইয়াবা ছড়িয়ে দেওয়া হতো।

শুধু মাদক কারবারিই নয়, অস্ত্র ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসা এ বাবুল মেম্বারের নামে হত্যাসহ অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ভোরে টেকনাফের কাটাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাফরুল ইসলাম ওরফে বাবুল মেম্বারকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৫)।

এ সময় তার কাছ থেকে ৫৫ হাজার পিস ইয়াবা, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার বাবুল কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার একজন অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী। টেকনাফে তিনি পার্শ্ববর্তীদেশ থেকে মাদক চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে পরিচিত। বাবুল মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এলাকায় ২০-২৫ জনের একটি চক্র গড়ে তোলে।

তিনি মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় চাঁদাবাজি, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র, অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধভাবে চোরাই পথে গবাদি পশু চোরাচালান, অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, বাবুল ২০০৫ সালের পরবর্তীতে টেকনাফ এলাকায় মাদক ও অন্যান্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে যান। ২০১৭ সালে এলাকার অপর এক মাদক ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

নবীর সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে গ্রেপ্তার বাবুল বৃহৎ আকারে মাদক সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ে। তিনি নবী হোসেনের সঙ্গে চুক্তি করে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে নাফ নদী দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছিলেন।

মাদকসহ অন্যান্য চোরাকারবারির সময় তার দলের ২০-২৫ জন সশস্ত্র সদস্য পাহাড়া দিয়ে চালান বাংলাদেশে পৌঁছাতো। বাবুল মিয়ানমার থেকে সপ্তাহে ৪-৫টি ইয়াবার চালান এনে বালুখালী ক্যাম্প সংলগ্ন তার নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু চিংড়ির খামারের ভেতরে রাখতেন।

প্রতি চালানে প্রায় ২ লাখ ইয়াবা থাকতো এবং সেসব ইয়াবা দেড় লাখ টাকায় কিনে এনে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতেন। প্রতি মাসে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ ইয়াবা নিয়ে আসতো বাবুলের সিন্ডিকেট।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার বাবুল ২০০১ সালে চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হয়ে ১ বছর পড়াশোনা করে। পরে সেখানে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ২০০৩ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।

২০০৫ সালে পালংখালি এলাকায় জাবু নামের এক ব্যক্তিকে খুনের দায়ে মামলার আসামি হন। এরপর থেকেই তিনি অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন। অবৈধ অর্থ দিয়ে কক্সবাজারে বিলাশ বহুল ফ্ল্যাট, ট্রাক, এলাকাতে জমি এবং মাছের পজেক্টসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।