ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেগাপ্রকল্প উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর 'অক্টোবর চমক'

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৩
মেগাপ্রকল্প উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর 'অক্টোবর চমক' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ফাইল ফটো

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ বানাতে 'দিন বদলের ইশতেহার' ঘোষণা করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়েই শেখ হাসিনা'র সরকার ২০০৯ সালে ঘোষণা করেছিলেন 'ভিশন-২০২১'।

বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার পদক্ষেপ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে বিলিয়ন ডলারের দশ মেগাপ্রকল্প নিয়ে 'ফাস্ট ট্র্যাক' কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আরও ৫ মেগাপ্রকল্প আছে।

আর এই অক্টোবর মাসেই উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৫টি। যেটাকে নেটিজেনরা বলছেন শেখ হাসিনার 'অক্টোবর চমক'।

১০ মেগাপ্রকল্প- ১. এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, ২. পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ৩. পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, ৪. মেট্রোরেল, ৫. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৬. রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প,  ৭. মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, ৮.  পায়রা সমুদ্র বন্দর,  ৯.  দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, ১০. মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র।

এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আরও ৫ মেগাপ্রকল্প হচ্ছে- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল।

এই ১৫ মেগাপ্রকল্পের মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেছে। আর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে গত দুই সেপ্টেম্বর। আর গতকাল (৫ অক্টোবর) উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প, ২৩ অক্টোবর মেট্রোরেল ও ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।  

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এক মাস পরে সেপ্টেম্বরেই প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।  

প্রকল্প সুত্র মতে,  ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। তবে এ রেলপথ এখনই উদ্বোধনের জন্যে প্রস্তুত। বাকি  কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন নির্মাণ, যেসব স্টেশন নির্মাণ হয়নি সেখানে এখন ট্রেন থামবে না।

তবে ভাঙ্গা যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ, এই অংশের উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। পদ্মা রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।  

রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন , ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।  

অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্য তিন প্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় সাপেক্ষে উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তিন প্রকল্প হচ্ছে - ১. খুলনা-মংলা রেল প্রকল্প, ২. দোহাজারী- কক্সবাজার রেলপথ  প্রকল্প, ৩. আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেলপথ প্রকল্প।

মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্প

দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এরইমধ্যে মেট্রোরেল নিয়মিত চলাচল করছে। আর ২৩ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। এরইমধ্যে এ অংশে পরীক্ষামূলক চলাচল করছে।  

এ রেলপথ উদ্বোধনের পরে ঢাকাবাসীকে  উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে মেট্রোরেলে লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল কাজ শেষ। এ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে৷ ২৮ অক্টোবর। এ প্রকল্পের মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।  

এ প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করেন সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের আকাশ যাত্রার সর্ববৃহৎ প্রকল্প

৭ অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনও এখন দৃশ্যমান। চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে বাড়বে উড়োজাহাজ চলাচল ও যাত্রীসেবার মান। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংকেত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাদেশের ১৪০ সেতু উদ্বোধন 

২২ অক্টোবর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে ১৪০টি সেতু, ১২টি ওভারপাস ও যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র (ভিআইসি) উদ্বোধন করা হবে। সেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের ক্ষতিপূরণের চেক দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণের অপেক্ষায় রয়েছে এই দুই প্রকল্পও।

প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে থাকা বাকি ৮ প্রকল্পও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই একে একে উদ্বোধন করবেন। কারণ এর পরেই রয়েছে জাতীয় নির্বাচন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একের পর এক মেগাপ্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর ঘটিয়েছেন। এবার দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যেতে ঘোষণা করেছেন রূপকল্প-২০৪১।

এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতে নিয়েছেন মেট্রোরেলের আরও পাঁচটি প্রকল্প, যার মধ্যে আছে পাতাল রেলও। সঙ্গে নিয়েছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৮ মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে'তে রুপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা।  

যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৮ লেনে রুপান্তর করার প্রকল্পও।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৩
এনবি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।