যশোর: তিন দিনের টানা বর্ষণে যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বাগদাহ বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সরকারি একটি সেতুর মুখে বাঁধ দেওয়ার কারণে এ অবস্থার সুষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে তলিয়ে গেছে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বসতভিটার আঙিনা ও ফসলের ক্ষেত। এমনকি ঘরের মধ্যে পানি থই থই করছে। স্কুলে যেতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাগদাহ বিল পাড়ের এই গ্রামটি নীচু আর আশপাশের এলাকা তুলনামূলক উঁচু। এ জন্য ৩০ বছর আগে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য ভবদহের টেকা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে একটি খাল খনন করা হয়। প্রায় ২০ বছর আগে মাছ শিকারের জন্য খালটিতে একটি ইটের বাঁধসহ আরও কয়েকটি বাঁধ দেওয়া শুরু হয়।
বাগদাহ বিলে সরকারি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন এলাকার মুনছুর নামে এক মৎস্য ব্যবসায়ী। তিনি পানি প্রবাহে বাঁধা দিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। এছাড়াও খালের পাশের বাসিন্দারা বাঁধের পাশে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলেই গ্রামের একটি অংশ এখন পানিতে তলিয়ে যায়।
হুমায়ুন বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে বর্ষাকালে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কেউ এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেন না। যারা খালে বাঁধ দেন, তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। এ জন্য কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এমনকি তাদের নামও বলতে চান না।
ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম বলেন, বসবাসের ঘরে ও রান্না ঘরে পানি উঠে গেছে। রান্না করতে পারিনি। আমরা ছয়জন সদস্য সবাই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
আকলিমা বেগম নামে এক নারী বলেন, জলাবদ্ধতায় পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষেতের আমন ধানের চারা ডুবে গেছে।
মারুফ ইসলাম ও রাজু হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে বের হতে হলে কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পানি ডিঙিয়ে যেতে হয়। বর্ষা আমাদের জন্য অভিশাপের মতো। জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, এই গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বই-খাতা ও জামা একটি ব্যাগে ভরে তা মাথায় নিয়ে হাঁটু পানি মাড়িয়ে মূল সড়কে উঠছে। পরে সেখানে ভেজা কাপড় রেখে আবার শুকনো জামা পরে স্কুলে যায়। বিকেলে ফেরার পথে একইভাবে বাড়ি যায়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কয়েকজন মিলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হয়।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যাটি অবগত হয়ে শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে শীঘ্রই খালের বাঁধ অপসারণ করে গাছপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পরে গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা সংস্কার করা হবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত মুনছুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থান্দার কামরুজ্জামান বলেন, আমি শুক্রবার সকালে বিষয়টি জেনেছি। কালভার্টের মুখ বন্ধ করে রাখা আছে। আমি শ্রমিক নিয়ে অপসারণ করার চেষ্টা করছি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম আবু নওশাদ বাংলানিউজকে বলেন, টানা বর্ষণে বাগদাহ গ্রামের অনেক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছেন। এর আগে কেউ পোলের (সেতুর) মুখ বন্ধ করে রেখেছেন। আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। দ্রুতই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২৩
ইউজি/এফআর