ঢাকা: দেশের সংসদীয় কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে স্থায়ী সমাধান চান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
সোমবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপে ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত জাতীয় সংলাপে এ বিষয়ে মতামত দেন আলোচকরা।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুশানের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
সংলাপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আমাদের নবী বলেছেন, যে কোনো কাজ শুরু করার আগে তোমরা আলোচনা করবে। অথচ আজকে আমাদের সরকারদলীয়রা বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা, কিসের আলোচনা। এটি হলো সংকট এড়িয়ে যাওয়ার একটি বাহানা। আমি চাই একটি স্থায়ী সমাধান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তি নিয়ে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। আজকে আপনি নির্বাচন করবেন, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গেলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যে ধস নেমেছে, সেটি সংশোধন ছাড়া সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আজকে এ সংকট কেন হয়েছে, প্রতিনিয়ত আমরা আইন সংস্কার করছি। আপনি ক্ষমতায় এসে নিজেদের মামলা প্রত্যাহার করবেন, আর বিরোধী দলকে একই আইনে মামলা দেবেন। এক দেশে দুই আইন হবে না। তাই আমি মনে করি, আজকে সংকট কাটানোর জন্য আমাদের নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সংলাপের কোনো বিকল্প নেই, আলোচনার বিকল্প নেই। নির্বাচন ব্যবস্থার স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে হবে।
শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, সবার আলোচনার মূল বিষয়বস্তু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে পারি। কোন প্রক্রিয়া? শুধু আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপিয়ে দিলে হবে না। আমরা ১/১১- এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যাই। সেটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো এখন জ্বালাও-পোড়াও থেকে বেরিয়ে এসেছে। এটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের ২০১৩-১৪ সালের নৈরাজ্যর কথা ভুলে গেলে চলবে না। যে নৈতিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে, সেটি নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। মূল জিনিসটা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা টেম্পোরারি ব্যবস্থায় নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন হবে না। বরং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরেই করতে হবে।
আয়োজকদের উদ্দেশ্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনারা কি মনে করেন সংলাপ করে সমস্যার সমাধান হবে? কেন বলছি এরকম করে? লড়াইটা এখন মুখোমুখি। আপনার হাতে সময় আছে ৩ মাস। এ সময়ের মধ্যে সংলাপ করে কোনো সমাধান হবে বলে মনে হয়? কে কার সঙ্গে সংলাপ করবে? হয় কি সত্য যেটি, সেটি কখনও চাপা থাকে না। বলা হচ্ছে উন্নয়নের জোয়ার হচ্ছে, এর মধ্যে একটি বড় পয়েন্ট হচ্ছে রংপুরে এখন আর মঙ্গা নেই। কিন্তু আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, সেখানে ৭১ শতাংশের বেশি দরিদ্র। সংলাপ হতে পারে, কিন্তু এ সংলাপ দিয়ে আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে? আমরা বলেছি, ১০ থেকে ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, দেখে মাথায় গেঁথেছে এটি, এ সরকার পরিবর্তন করতে হবে। এটি কোনো জেদ নয়। আমরা দেখে-দেখে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে নির্বাচন হবে। সরকার বলছে তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। ২০১৮ সালে পরিণতি কি হয়েছে সেটি রাজনীতি সচেতন মানুষ মাত্রই জানে। আওয়ামী লীগের পলিটিক্যাল সেটেলমেন্টের ইকোনমিক আউটপুট দেখা যাচ্ছে। রিজার্ভ তলানিতে নামছে। খেলাপি ঋণ হচ্ছে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। এ অবস্থা এসেছে আওয়ামী লীগের পলিটিক্যাল সেটেলমেন্টের কারণেই। তাই এখন যদি শেখ হাসিনা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনও দেব, তিনি সেটি পারবেন না। কারণ এখানে আরও অংশীজন রয়েছেন। বিএনপিকে আগেরবার ৬টি আসন ধরিয়ে দিয়েছেন, এবার বড়োজোর ১২টি আসন ধরিয়ে দেবেন। বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে একমত যে, আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি চাই।
গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, সব শর্ত পূরণ করার পরেও আমার দল নিবন্ধন পায়নি। সরকারের একটি এজেন্সি আমাকে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, রাজি না হওয়ায় আমাকে নিবন্ধন দেয়নি। অনেকে আজকে এখানে বলেছেন, আলোচনা করে কি হয়! আমি বলব, যুদ্ধের মধ্যেও আলোচনা হয়। আমি এ আলোচনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দেশ বাঁচান।
সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
এমকে/জেএইচ