বরিশাল: মা ইলিশ রক্ষার্থে ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ফলে ভারতে রফতানির অনুমতি থাকলে নিষেধাজ্ঞার কারণে আর ইলিশ মাছ পাঠানো যাবে না।
তবে নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে শেষ দিনে পোর্ট রোড মোকাম থেকে ১২ টন মাছ ভারতে পাঠানো হয়েছে।
মাছবোঝাই ট্রাক নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছানোর জন্য রফতানিকারী প্রতিষ্ঠানের সবাই বুধবার (১১ অক্টোবর) ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।
রফতানিকারক ইয়ার আলী সিকদার জানান, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে তারা তিনটি ট্রাকে ১২ টন মাছ ভারতের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। তাদের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবার একশ’ টনের মতো মাছ রফতানি করা হয়েছে ভারতে।
ভারতে ইলিশ রফতানি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নিরব হোসেন টুটুল জানান, গত বছরের চেয়ে এবার ২০ ভাগের এক ভাগ মাছ পাঠানো হয়েছে।
মাছ না থাকার কারণে এমনটা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ পাঠানোর সময় ছিল। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে বুধবার মধ্যরাত থেকে, যা ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। তাই সময় বৃদ্ধি না করলে ভারতে আর ইলিশ পাঠানো যাবে না।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রতিবারের ন্যায় বরিশাল নগরের পোর্টরোডস্থ বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ইলিশের মোকামে ক্রেতারা ভিড় ছিল লক্ষণীয়। তবে সংকটের কারণে নিষেধাজ্ঞার আগেও মাছের দাম আকাশচুম্বী বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
বুধবার রাতে মাছ কিনতে পোর্টরোডে আসা জিয়াউল করিম জানান, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে গত কয়েক বছর ধরে পোর্ট রোডে অনেক হাঁক-ডাক দিয়ে মাছ বিক্রি হয়। যা স্বাভাবিক দিনগুলোর থেকে অনেক কমেই কেনা যেত। গত বছরও তিনি এ সময়ে ৫ কেজি মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ কিনেছিলেন ৮০০ টাকা কেজি দরে। সেই মাছের এবারে দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকা।
এত দাম দিয়ে মাছ কেনা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
মাছ বিক্রেতা মো. খোকন জানান, দীর্ঘদিন ধরে পোর্ট রোড বাজারে মাছ বিক্রি করেন। এ বছরের মতো ইলিশের এত সংকট আগে দেখেননি।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে পোর্ট রোডের আড়ত খালি করতে হয়। নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর কোন আড়তে ইলিশ মাছ পেলে জরিমানাসহ নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই সকল আড়তের মাছই বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এবারে মাছের দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি একটু কম ছিল নিষেধাজ্ঞার আগ মুহূর্তে।
এদিকে বাজার ঘুরে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে বাজারে দেড় কেজি সাইজের প্রতিমণ ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়। যা গত বছর এ সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার টাকায়।
এ বছর এক কেজি ২শ’ গ্রাম সাইজের মাছ প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা প্রতিমণ। গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৬০ হাজার টাকায়। এলসি সাইজের ইলিশ (৭শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম) বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা প্রতিমণ। গত বছর ছিল ৫০ হাজার টাকা। ৫শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশ এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৫২ হাজার টাকা মণ। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। জাটকা বিক্রি হয়েছে ২৬ হাজার টাকা দরে। গত বছর বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার টাকায়।
জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ মাছ রফতানি করতে নগরীর পোর্ট রোড মোকামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়েছে। এছাড়াও ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের হয়েও পোর্ট রোড থেকে ইলিশ মাছ ভারতে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে জে জে এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের খান হাবিব ছয়বারে ৮ শত মণ ইলিশ ভারতে রফতানি করেছেন।
বুধবার শেষ দিনে ৫০ মণ মাছ পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ব্যবসায়ী খান হাবিব বলেন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত তেমন মাছ আসেনি মোকামে। স্থানীয় নদীর ৭০/৮০ মণ মাছ এসেছিল। এছাড়াও সাগর থেকে আসা ট্রলারে তেমন মাছ নেই। একশ’ ট্রলারের মধ্যে ১০/১২ টি ট্রলার ৫/১০ মন করে মাছ পেয়েছে। বাকি ট্রলারে খুব সামান্য মাছ ছিল।
এদিকে মৎস্য বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন জানান, ১১ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন স্থলসহ সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ থাকছে। এ সময়ে বরিশাল বিভাগের ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৪১ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ