ঢাকা: শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে রাজধানীতে ‘এক মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচি পালন করেছে সরকার।
যার অংশ হিসেবে নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মগবাজার মোড়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
রোববার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে ১০টা ১ মিনিট পর্যন্ত মগবাজার মোড়ে নিরবতা পালনের মাধ্যমে ‘এক মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচি পালন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
একই সময়ে মগবাজার ছাড়াও রাজধানীর আরো ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘শব্দদূষণ বন্ধ করি, নীরব মিনিট পালন করি’ স্লোগানে এই কর্মসূচি পালন করে এই মন্ত্রণালয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মগবাজার মোড়ে মানববন্ধন করে শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল-কলেজের স্কাউট সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ট্র্যাফিক পুলিশ ও পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যরা।
এ সময় তারা ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে চলাচলরত সাধারণ পথচারীদের শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করেন। পাশাপাশি গাড়িচালকদের মধ্যে শব্দ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতামূলক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মগবাজারে যেখানে সাধারণ সময়ে শব্দের মাত্রা থাকে ৭০ থেকে ৯০ ডেসিবেল, সেটি সকাল ১০টা থেকে ১০টা ১ মিনিট পর্যন্ত ৬০ ডেসিবেলের নিচে নেমে আসে।
মগবাজারে কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, একদিনে শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। আমরা আজকের কর্মসূচির মাধ্যমে যানবাহনের চালকসহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছি। শব্দ দূষণের কারণে মানুষ বধির হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ ও ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, আজকের কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকদের সচেতন করতে পেরেছি বলে আশা করছি। আমরা সাধারণ মানুষ, গাড়ি চালকসহ সবার ভালো সাড়া পেয়েছি। সবাই বিষয়টিকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে। গাড়ি চালকরা তাদের কিছু অপারগতা প্রকাশ করেছে। আমরা আগামীতে সেগুলো নিয়ে কাজ করবো।
মগবাজার মোড় ছাড়াও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে, শাহবাগ মোড়, উত্তরা, বিজয় সরণি মোড়, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, গাবতলী, মহাখালী, গুলশান-১, কমলাপুর, বৌদ্ধমন্দির ও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় ‘এক মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে ১২ অক্টোবর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি সম্পর্কে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে ফারহিনা আহমেদ বলেন, শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। অতিমাত্রায় শব্দদূষণের কারণে কানে কম শোনা, আংশিক বা পুরোপুরি বধিরতা, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা এবং মনোসংযোগ নষ্টসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, গর্ভবতী মায়েদের অকাল গর্ভপাত, গর্ভস্থ বাচ্চা বধির বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। শব্দদূষণের ফলে দেশের মানব সম্পদ তথা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, শব্দ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতামূলক থিম সং, টিভিসি, রেডিও ড্রামা ও ডকুমেন্টারি নির্মাণ ও প্রচার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার কাজ চলমান রয়েছে। শব্দ সচেতনতামূলক বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড স্থাপন, লিফলেট, স্টিকার, মুদ্রণ ও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা যুগোপযোগী করা হচ্ছে।
বর্তমানে ঢাকা শহরের শব্দদূষণ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে জানিয়ে পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ