ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রকৃতিতে মানুষের অপরিকল্পিত হস্তক্ষেপ, নদী শাসন ইত্যাদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা প্রভাবজনিত কারণে দুর্যোগে বাংলাদেশের বিপদাপন্নতা কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোয় যেমন জান মালের ক্ষতি হয়েছে তেমন অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে।

যা বাংলাদেশকে তার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় আয়োজিত সভায় এসব অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যথযাথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস। এ উপলক্ষে মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ডের প্রধান গোলাম রাব্বানী, বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ও দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, নাহাবের সমন্বয়কারী মো. রওশন ও সিনিয়র সাংবাদিক শফিকুল ইসলামসহ লাইট হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদ। তিনি জানান, দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি মানুষের জীবন ও সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের পথে এক বিশাল অন্তরায়। বিশেষ করে দরিদ্র সম্প্রদায়ের জন্য, যারা অত্যন্ত কষ্টার্জিত উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। দুর্যোগের ফলে কেবল সেই দেশ বা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন নয়, বরং এর ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পরিবর্তিত প্রযুক্তি, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশ ও ভৌগলিক বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন, এইচআইভি-এইডসের প্রকোপ, ভূতাত্ত্বিক বিপর্যয় ও ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ঝুঁকি তীব্রতর করে তুলেছে। পরিবর্তনের এ অব্যাহত ধারা বিশ্ব অর্থনীতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের পথে বিরাট বাধাস্বরূপ।

তারা বলছেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে আসছে। এসব ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, কালবৈশাখী, টর্নেডো, নদী ভাঙন, উপকূল ভাঙন ও খরা ইত্যাদি। ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মাঝামাঝি হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। এছাড়াও বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং দারিদ্র ও ঘনবসতির দরুণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি ভয়াবহ। ‘ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট ২০১১’ অনুযায়ী-দুর্যোগের ঝুঁকি এবং বিপদাপন্নতার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১৫তম।

তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ৭৫ শতাংশ চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত, যা জ্বালানী ব্যবহার জনিত কারণে কার্বন নিঃসরণ দ্বারা হয়। দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন দেশগুলো তারাই, যারা সমস্যায় সবচেয়ে কম অবদান রেখেছে। (জলবায়ু অভিযোজন প্ল্যাটফর্ম, ২০২২) ১৯৭০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, জাতিসংঘ দেখেছে যে আবহাওয়া, জলবায়ু এবং পানির বিপদ থেকে মৃত্যুর ঘটনার ৯১ শতাংশ ঘটেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। ২০৩০ সালের মধ্যে, বিশ্ব প্রতিদিন প্রায় ১.৫টি উল্লেখযোগ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। বিগত দুই দশকে, গড়ে প্রতি বছর বিশ্বে ২০০ মিলিয়ন মানুষ দুর্যোগে সাড়া প্রদান সক্ষমতা ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রমের গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দারিদ্র বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচিতে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগকালীন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন নীতি- কৌশল প্রণয়ন করেছে যা সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার যে সকল নীতি- কৌশল প্রনয়ণ করেছে তা হলো, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৫ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (তহবিল পরিচালনা) বিধিমালা  ২০২১।

২০২৩ সালের থিমটি গ্রহণ করা হয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ২০১৫-২০৩০ এর জন্য সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যবর্তী পর্যালোচনা থেকে, যেখানে ২০২৩ সালের মে মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দুর্যোগের স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার জন্য একটি রাজনৈতিক ঘোষণা গৃহীত হয়েছিল। দিবসটির থিম সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক, জীবন, জীবিকা, অর্থনীতি এবং মৌলিক অবকাঠামোর ক্ষতি প্রতিরোধ ও হ্রাস করার আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৩
টিএ/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।