ঢাকা: বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো কর্মীদের বড় অংশ এখন নারী প্রবাসী শ্রমিক, যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে চাকরি নিয়ে যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৮৮ জন।
বিএমইটি তথ্য মোতাবেক, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী শ্রমিক গেছেন জর্ডানে। দেশটিতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারী শ্রমিক গেছেন এক লাখ ৯২ হাজার ৯১৭ জন বা মোট প্রবাসীর নারী শ্রমিকের ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে আরব আমিরাত; দেশটিতে নারী শ্রমিক গেছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৪০ জন; যা মোট প্রবাসী নারী শ্রমিকের ১৫ শতাংশ। ওমানে গেছেন ১০ দশমিক ২২ শতাংশ বা এক লাখ ১৯ হাজার ১৭২ জন। এরপর লেবালনে গেছেন এক লাখ আট হাজার ২২৯ জন নারী, যা মোট নারী শ্রমিকের ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য দেশে কর্মরত থাকা নারী শ্রমিকের মধ্যে কাতার, মৌরিতানিয়া, কুয়েত, বাহরাইন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও হংকং। এ সব দেশে কর্মরত নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৫০ হাজার ১০০ জন পর্যন্ত।
তথ্য মতে, প্রবাসী নারী শ্রমিকের ৭৩ শতাংশের ওপরে অদক্ষ গৃহশ্রমিক হিসেবে দেশের বাইরে গেছেন। যারা সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। যার অধিকাংশই নিয়োগদাতা দেশের খরচে বিদেশে গেছেন। এর বাইরে জর্ডান, মৌরিতানিয়া ও লেবালনের কিছু নারী গার্মেন্ট কারখানার দক্ষ শ্রমিক হিসেবে ভিসা নিয়ে গেছেন, যার অধিকাংশ নিয়োগদাতার খরচে বিদেশে গেছেন।
১৯৯১ সাল থেকে বিদেশে কাজের সন্ধানে নারী শ্রমিকদের যাওয়া শুরু। এরপর ২০০৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে যে সংখ্যক নারী শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন ২০০৪ সালে এক বছরে প্রায় তার সমান নারী শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা আরও বেশি। মূলত ২০০৪ সাল থেকেই বিদেশ যাওয়া নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
বিএমইটির উল্লেখকৃত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে প্রবাসে গিয়েছেন ২ হাজার ১৮৯ জন; ২০০৪ সালে যায় ১১ হাজার ২৫৯ জন। ২০১৪ সালে উঠে ৭৬ হাজারে। এরপর কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে কিছুটা কমলেও প্রতি বছরই এক লাখের বেশি নারী শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন।
একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন নারী বিদেশ চাকরির জন্য গেছেন।
বিপুল সংখ্যাক নারী বিদেশে গেলেও কোন অবস্থায় কর্মরত আছেন, বিদেশে যাওয়ার সময় প্রতিশ্রুত কাজ পাচ্ছে কি না, শ্রম আইনের অধিনের সুবিধা পাচ্ছে কি না, তা দেখার ব্যবস্থা নেই। নারী শ্রমিক পাঠাতে সংশ্লিষ্ট দেশের সাঙ্গে চুক্তির সময়ে স্পষ্ট উল্লেখ না থাকা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ভাষা না জানা এবং নিজেদের অসচেতনতার কারণে অনেক নারী শ্রমিকই চাকরির মেয়াদের আগে ফিরে আসেন। এদের বড় একটি অংশ সর্বস্ব খুইয়ে বিদেশ থেকে ফেরেন। এর মধ্যে কিছু নারী শ্রমিক দেশে এসে মুখ খুললেও বাকিরা থেকে যাচ্ছেন সবার অজান্তে।
এ বিষয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট-রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, প্রবাসী আয় শ্রমিকরা বিশ্বের যেকোনো দেশে কর্মরত থাকবেন। তবে নারীর কর্মের জায়গাটা যেন নিরাপদ থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে কর্মরত নারী শ্রমিক নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা আছে, তাতে আমরা অবশ্যই এমন চাই না। সেখানে হাউজ কিপিং মানে নারীকে টর্চারের মধ্যে ফেলে দেওয়া, নারী শ্রমিক মানেই একটি দাস ব্যবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া, আমরা এমন চাই না।
তিনি বলেন, নারী কর্মের জন্য নারীরা বিদেশে যাবে। তবে যাওয়ার আগে তার দক্ষতার বিষয়টি যেন মনোযোগ দেওয়া হয়, তার মধ্যে যেন আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেওয়া হয়, যাতে নারী প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে সুফলটা তুলে নিয়ে আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি জোর সুপারিশ, যে কোনো চাকরি নিয়ে নারীকে প্রবাসে পাঠানো যাবে না। হাউজকিপিংও যদি হয় তারপর তার শ্রমিকের মার্যাদা দিয়ে তার প্রত্যেকটা সুবিধা যাতে পায়। সব নারী গৃহশ্রমিককে শ্রম আইনের কাভারেজের বাইরে থাকে। এ সব গৃহশ্রমিকদের যেন শ্রম আইনের অধীনে আনা হয়, যাতে আইনের অধীনে সুবিধাগুলো নারী শ্রমিকরা আনতে পারে। এ দাবি আমাদের সব সময়ের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩
জেডএ/এমএম