বরিশাল: দেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। এই ঝড় মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় তিন হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকেেল বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় বলা হয়, বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
সভায় আরও জানানো হয়, বিভাগে তিন হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রেই ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৬১০ জন মানুষ এবং এক লাখ ৫২ হাজার ২২৭টি পশু আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া বিভাগের ৫২টি মুজিবকেল্লাও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়কবলিতদের জন্য এক হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৪ লাখ তিন হাজার টাকা, ৯৬ বান্ডিল টিন ও দুই হাজার পিস কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা দিয়ে তাৎক্ষণিক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এছাড়া পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও শুকনো খাবারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলা সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা যাবে।
সভার সভাপতি বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী বলেন, এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়ের তথ্য চূড়ান্তভাবে পাওয়া যায়নি। তবে ঝালকাঠিতে কিছু লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গম ও চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে থাকা মানুষদের সন্ধ্যার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য স্ব স্ব জেলার প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কাজটি পরিচালনা করছেন। সেইসঙ্গে এ কাজে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, এ দুর্যোগে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সদস্যরা বরিশাল বিভাগে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও থাকছেন আমাদের সঙ্গে। বিভাগের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সভায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে গোটা বিভাগে ৪১২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। যারা এখন থেকে দুর্যোগ-পরবর্তী সময় পর্যন্ত অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। আর পানিবাহিত রোগের সব ধরনের ওষুধসহ চিকিৎসা সামগ্রীর কোনো ঘাটতি নেই।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) বরিশাল রেঞ্জের পরিচালক মো. আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের সাড়ে ১১ হাজার আনসার-ভিডিপির সদস্য পূজার দায়িত্বে রয়েছেন, যারা সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের পর আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হবেন। উপজেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী, বিগত সময়ের মতো তাদের বিভিন্ন কাজে মোতায়েন করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিভাগের দুটি নৌ স্টেশনসহ ৪২টি স্টেশন ও সাড়ে ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, বরিশাল বিভাগের এক হাজার ৮৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে আগে থেকেই। আর যে কোনো ধরনের উদ্ধারকাজে বরিশাল বিভাগের পাঁচ জেলায় ৩২ হাজার ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
বিভাগে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিরও (বিডিআরসিএস) দেড় হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
অপরদিকে দুর্যোগে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিক রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
তবে বিভাগের যেসব বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তা কিছুদিন আগে মেরামত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
এমএস/এইচএ/