ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নবজাতক বিক্রি করা সেই মায়ের পাশে ইউএনও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
নবজাতক বিক্রি করা সেই মায়ের পাশে ইউএনও

ঠাকুরগাঁও: অভাবের কারণে সন্তান বিক্রয় করে সেই মা শিল্পি বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন। শিল্পি বেগমকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর উপহার দেওয়া হয়।

এ ছাড়া নবজাতক সন্তানকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন ইউএনও।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকালে সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বাতেন মোড় এলাকায় শিল্পী বেগমের হাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের চাবি তুলে দেন ইউএনও বেলায়েত হোসেন। ঘর পেয়ে মহাখুশি তিনি।

দেনা পরিশোধ ও চরম অভাবে নিজের দুই দিন বয়সের সন্তান মাত্র ৩০ হাজার বিক্রয় করে দিয়েছিলেন মা শিল্পি বেগম এমন সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের গোয়ালপাড়া এলাকায় প্রায় ১২ বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় শিল্পী বেগম ও রায়হান দম্পতি। তাদের সংসারে আরও ২ ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। শিল্পীর স্বামী পেশায় একজন মোটর গ্যারেজ শ্রমিক। সে আয়ে সংসারের ভরণপোষণ চালানো যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে আরও সন্তান নেওয়া ছিল বিলাসিতা। নিয়তি মেনে নিলেও নতুন সন্তানের খবরে যেন মরার উপর খরার ঘা। আরেক সন্তান আসছে শুনে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গ (হিজরা) বানিয়ে তিন সন্তান আর স্ত্রীকে ছেড়ে ঢাকা পাড়ি জমান স্বামী রায়হান।

এরপর থেকেই অভাবের সংসার নিয়ে বিপাকে পরে যায় শিল্পী বেগম। সন্তান গর্ভে থাকার সময় থেকে বাড়ি ভাড়া ও পাশের দোকান মিলে প্রায় ৫ হাজার সাতশত টাকা বাকি হয় শিল্পীর। অন্য সন্তানদের যত্ন বা খাবার যোগার করতে হিমশিম খেতে হয়। পেটে সন্তান থাকায় মানুষের বাসায় কাজ করতেও পারে না শিল্পি।

অবশেষে গত বুধবার ২৫ অক্টোবর বিকালে শিল্পি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের জন্ম হয় তবে জন্মের পরেই বাচ্চার জ¦র ও অসুস্থ হয়ে পরে। পরেরদিন বৃহস্পতিবার সেই বাচ্চাকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয় শিল্পি। একে তো অভাবের সংসার তার উপরে সন্তানের চিকিৎসা খরচ চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় শিল্পির। অভাবের বিষয় জানতে পেরে গর্ভের সন্তান বিক্রির পরামর্শ দেয় দালাল চক্র। পরে নিরুপায় হয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতেই নবজাতক শিশু বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

চিকিৎসার অভাবে বাচ্চাটির অবস্থা যখন খুবই খারাপ তখন হসপিটালেই নিঃসন্তান এক মা শিল্পির বাচ্চাটি নিতে ইচ্ছা পোষণ করেন। সেই মোতাবেক শিল্পি তার বাচ্চাটি সেই মাকে দিতে রাজি হয়। পরে স্ট্যাম্পে লেখালেখির মাধ্যমে সন্তান হস্তান্তর করা হয়।

এই বিষয়ে শিল্পি বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার আরও তিনটি সন্তান রয়েছে। স্বামী নাই ওই বাচ্চাগুলো নিয়ে সংসার চালাতে পারি না। মানুষের বাসায় কাজ করে খরচ চালাই। এই নবজাতক বাচ্চা নিয়ে কীভাবে মানুষের বাসায় কাজ করবো। আবার বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাহিরে অনেক দেনা আছে। সেজন্য বাচ্চাটা আমার যেন ভালো থাকে তাই বিক্রি করে দিয়েছি। বিক্রির টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়েছি ও চাল কিনেছি। এই বাচ্চাটি লালনপালন করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন জানান, অভাবের তাড়নায় কোনো মা সন্তান বিক্রয় করেছে এমনটা খবর পাওয়ার পরেই আমরা সেই মায়ের পাশে এসে দাঁড়াই। কোনো নবজাতক শিশু কেনাবেচার কোনো সুযোগ নেই, এটা অপরাধ। আজ তাকে একটি ঘর উপহার দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার সন্তান তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।