ঢাকা: তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার যে প্রস্তাব মালিকপক্ষ দিয়েছিল, সেটি অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) শ্রম ভবনে তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, মালিকপক্ষ যে মজুরি ঘোষণা করেছে, সেটাকে আমরা অবশ্যই অযৌক্তিক মনে করি।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পোশাকশ্রমিকদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করার জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ডকে সুপারিশ করবেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা করার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে যাতে কোনো অশান্তি না হয়, যাতে কেউ কারখানায় আগুন না দেয় এবং যাতে শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য শ্রমিকনেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজকে আমরা তাদের সঙ্গে বসেছি। সভায় মতবিনিময় শেষে আমরা একটি জায়গায় এসে পৌঁছেছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য যাতে বর্তমান বাজার দর বিবেচনা করে একটি মজুরি ঘোষণা করা হয়, সেজন্য আমরা ন্যূনতম মজুরি বোর্ডকে সুপারিশ করব।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস খাত থেকে আমাদের একটি বড় ধরনের রেমিট্যান্স আসে। আমি মনে করি, গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাক, এটা কোনো শ্রমিক, শ্রমিকনেতা বা মালিকপক্ষ চাইবে না। কেউ তার হুমকির জায়গা হতে চায় না। সুতরাং শ্রমিকরা ফ্যাক্টরিতে আগুন দেয়, এটি আমি বিশ্বাস করি না।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চাই শ্রমিকদের উন্নয়ন হোক। শ্রমিকরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকুক। তাদের সন্তানরা লেখা-পড়া করার সুযোগ পাক। গার্মেন্টস সেক্টর আমরা ধ্বংস হতে দেব না। এই শিল্পের ওপর দেশের অনেক কিছু নির্ভর করে। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নও এর সঙ্গে জড়িত। শ্রমিকদের যেমন বাঁচতে হবে, তেমনি মালিকদেরও বাঁচতে হবে। শ্রমিক বাঁচলে মালিক বাঁচবে, শিল্প বাঁচবে। মালিক বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে, শিল্প বাঁচবে।
এ সময় তিনি শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। আগামী ৭ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি বোর্ড একটি গ্রহণযোগ্য নতুন মজুরি ঘোষণা করবে বলে আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, গত সাত দিন ধরে গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা চলছে। এই অস্থিরতার কারণে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক গার্মেন্টস কারখানায় আক্রমণ করা হয়েছে, আগুন জ্বালানো হয়েছে, রাস্তায় অবরোধ হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, সংঘর্ষে একজন মারা গেছে। মজুরি বোর্ড তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এখনো সময় হাতে আছে।
এ সময় বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিকনেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে চলছে অস্থিরত। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ন্যূনতম মজুরি ২৩-২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
এমন পরিস্থিতিতে গত রোববার (২২ অক্টোবর) সেগুনবাগিচায় ন্যূনতম মজুরি বোর্ডে সরকার-মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা। তবে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা নূন্যতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন, যা শ্রমিকদের চাওয়ার অর্ধেক। তাই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন শ্রমিকরা।
এরপর থেকেই রাজধানীর মিরপুর, গাজীপুর, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় চলছে শ্রমিক বিক্ষোভ। কোথাও কোথাও তা সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকেও মিরপুরে বিক্ষোভ করেছেন পোশাকশ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে মালিকপক্ষ তাদের প্রস্তাবিত নূন্যতম মজুরি আরেকটু বাড়াতে চায়। তবে সেটা কতটুকু, তা এখনো জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ