ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাতারবাড়ী বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

সুনীল বড়ুয়া,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
মাতারবাড়ী বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজার: কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বহুল প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এই চ্যানেলে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন তিনি।

শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকাল পৌনে চারটারদিকে দিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দরের ভেতরে উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে তিনি এ দুই প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন।

এর আগে হেলিকপ্টারে করে রামু থেকে মহেশখালী মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে গাড়িতে করে সমুদ্র বন্দরের উদ্বোধন মঞ্চে আসেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।  জোয়ার-ভাটায় যেকোন সময়ে ৮হাজার টিইইউএস’র জাহাজ ভিড়তে পারবে এখানে। ফলে আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনগুলোর জন্য বাংলাদেশে জাহাজ নিয়োজিত করার সুবিধা বাড়বে। এতে পণ্য পরিবহনে খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এ বন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়নসহ গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকসহ পেশাজীবীদের জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে এই বন্দর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, এ বন্দরকে ঘিরে এখানে যে লজিস্টিক ও সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্টের অবকাঠামো গড়ে উঠবে তা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বন্দরকে কেন্দ্র করে মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকা দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে জানিয়ে এই সাংসদ বলেন, উক্ত এলাকার আপামর জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে দেখার মতো। মাতারবাড়ী বন্দরকে ঘিরে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ আবর্তিত হবে তা বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা জিডিপিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই বন্দরের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ০.৬ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২.২ হতে ২.৬ মিলিয়ন  টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে বলে আশাকরা হচ্ছে। মাতারবাড়ী বন্দরকে ঘিরে এখানে বাণিজ্যিক হাব গড়ে তোলা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর যেমন দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন, মাতারবাড়ী বন্দরও দেশের অর্থনীতির জন্য আরেকটি প্যারালাল লাইফ লাইনে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক ড্রাফটের বাণিজ্যিক জাহাজ এই বন্দরে গমনাগমন করতে পারবে যা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অর্থ ও সময় বাঁচবে।  

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতার ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ী বন্দরের সাঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক প্রকল্পের অধিনে ২৭.৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়-১৭০৩ঘণ্টা, নভেম্বর ১১,২০২৩
এসবি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।