ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংসদে নারীদের আসন বাড়ানোর আহ্বান মহিলা পরিষদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
সংসদে নারীদের আসন বাড়ানোর আহ্বান মহিলা পরিষদের মহিলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে টেকসই ও অগ্রগামী করতে জাতীয় সংসদে নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো এবং এ ব্যবস্থা দুই থেকে তিন মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।  

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর-বিরোধী অবস্থান সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে জটিল ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে উন্মোচন করছে।  

গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে আহবান জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে টেকসই ও অগ্রগামী করতে নারীর রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো এবং এ ব্যবস্থা দুই-তিন মেয়াদ বলবৎ রাখা।  

প্রত্যেক রাজনৈতিক দল থেকে বেশি হারে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া এবং অর্থ যাতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়ে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া অধিকার এবং গণতন্ত্র ও  সুশাসন নিশ্চিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।  

সুপারিশগুলো হলো, সব রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি মনিটরিং করাসহ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন; নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন; নারী নির্যাতন প্রতিরোধ; সাম্প্রদায়িকতা ও নারীবিদ্বেষী মনোভাব প্রতিরোধ; আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, দলিত সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষণ।

লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আজকের সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে নারীকে অবমাননা করার দিকটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  

সংবিধানে নারী-পুরুষের সমতা ও ন্যায্যতার কথা বলা হলেও রাজনৈতিক ইশতেহারে নারী ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পায় না। এতে নারী সমাজের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সংরক্ষিত আসনে সংখ্যা বাড়ানো, সরাসরি নির্বাচন এবং নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণের জন্য মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হলেও বিষয়টি নারী নীতিতে তেমন গুরুত্ব পায়নি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নারীর জন্য সরাসরি আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সহজ নয়। কারণ সমাজের মধ্যে নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি ও উপস্থিতি, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শক্তি ও সম্পদের লড়াইয়ে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে নারীরা পিছিয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে - জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা দুই-তিন মেয়াদ বলবৎ রাখা আবশ্যক বলে মনে করে মহিলা পরিষদ।   

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নির্বাচনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।  

এ সময় তিনি সুশাসন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়  জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনবান্ধব নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এবং নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জোর দাবি জানান।  

সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি একক মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও নারীর অধিকার সুরক্ষায়  এই মন্ত্রণালয়ের জোরালো ভূমিকা পালন করবে- এটি মহিলা পরিষদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ও দাবি। '

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও কর্মকর্তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
ইএসএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।