ফরিদপুর: মাইক্রোবাস নিয়ে সড়কে ডাকাতি করা তাদের পেশা। কম খরচে যাত্রীকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে সব হাতিয়ে নিতেন তারা।
গ্রেপ্তাররা হলেন- বরগুনা সদর থানার পরিরখাল এলাকার মো. শাহ আলম আকন (৩৫) ও একই জেলার পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম (৫০)।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
তিনি আরও জানান, গত ১২ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাহাড়া মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. লোকমান কাজীর ছেলে শহিদুল কাজীকে (৪৫) ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে উঠায় এ চক্র। পরে শহিদুলের হাত, পা, চোখ বেঁধে লোহার রেঞ্জ ও লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে ১২ হাজার টাকা মূল্যের একটি মুঠোফোন ও নগদ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপরে শহিদুলের মুঠোফোন ব্যবহার করে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও ৪৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ডাকাতের হাতে নির্যাতনের শিকার শহিদুল কাজী বর্তমানে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
টাকা নেওয়ার পরও শহিদুলকে না ছাড়ায় শহিদুলের পরিবারের সদস্যরা ভাঙ্গা থানায় বিষয়টি জানায়। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদের গতিবিধি শনাক্ত করে ভাঙ্গার বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসায়। পরে ডাকাতদলের সদস্যরা শহিদুলকে ভাঙ্গার পুলিয়া এলাকায় একটি নির্জন জায়গায় ফেলে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা হন।
পথে মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে ভাঙ্গার বগাইল টোল প্লাজার নিকট পুলিশ গাড়িটি থামানোর সংকেত দিলে তারা টোল প্লাজার ব্যারিয়ার ভেঙ্গে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে তাদের ভাঙ্গার মনসুরাবাদ এলাকা পুলিশ বেড়িকেট দিয়ে গাড়িটি থামায়। ওই সময় গাড়ির চালকসহ চারজন পালিয়ে গেলেও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি সিলভার রঙের নোয়া মাইক্রোগাড়ি, বিভিন্ন কোম্পানির ৬টি মুঠোফোন, এল আকৃতির একটি লোহার তৈরি রেঞ্জ, ২০ ইঞ্চি লম্বা একটি সরু লোহার রড, নগদ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা ও তিনটি গামছা জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আসামি শাহ আলমের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা ও ডাকাতিসহ ২১টি ও আবুল কালামের নামে হত্যা ও ডাকাতিসহ ৮টি মামলা রয়েছে।
পালিয়ে যাওয়া চার ডাকাত সদস্যরা হলেন- ওই মাইক্রোবাস চালক বরগুনার তালতলী উপজেলার আংকুরজান পাড়ার সাগর হাওলাদার (৪৩), বরিশালের কাউনিয়া উপজেলার ভাটিখানা গ্রামের মো. সানোয়ার হোসেন (৩৬), বরিশালের মুলাদী উপজেলার চরপদ্ম গ্রামের মো. জাকির হোসন (৩৮) ও পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মো. ইলিয়াস (৩০)।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) তালাত মাহমুদ শাহানশাহ, ফরিদপুর ট্র্যাফিক পুলিশের পরিদর্শক তুহিন লস্কর, ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম ও ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল।
এ ব্যাপারে শহিদুলের ভাই কাজী ওয়াহিদুজ্জামান (৪০) বাদী হয়ে গত ১৩ নভেম্বর ভাঙ্গা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে ডাকাতি, শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশাররফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
এসএম