ঢাকা: জাতীয় সংসদে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষিত আসনের দাবি জানিয়েছে সমাজের পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের এ জনগোষ্ঠী।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সুস্থ জীবনের চেয়ারপারসন হিজড়া পার্বতী আহমেদ বলেন, সরকার হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে বর্তমানে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডাররা সমাজে অনেকটা ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তবে এখনও তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। জাতীয় পর্যায়ে হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কথা বলার মতো কেউ নেই। আমরা গভীরভাবে অনুধাবন করছি যে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছাড়া পূর্ণভাবে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় সত্যিকার কার্যক্রম নেওয়া সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন এবং সমাজের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে জয়া হিজড়া বলেন, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের শুধু স্বীকৃতি দিলেই হবে না, তাদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যখন তারা দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হবে, তখন তারা রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে। যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র তাদের দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর না করবে, ততদিন পর্যন্ত মানুষ তাদের নিয়ে অনেক কথা বলবে। হিজড়াদের নিয়ে এখনও অনেক নেতিবাচক কথা বলা হয়, লেখালেখি করা হয়। কিন্তু হিজড়ারাও এ দেশের নাগরিক। তাদের অধিকার দিতে হবে।
সচেতন হিজড়া অধিকার যুব সংঘের সভাপতি রবি বলেন, আমরা সমাজে পিছিয়ে আছি কারণ আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা কিনা পারি? আমরা আগেও দাবি জানিয়েছি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের জন্য। আজকে আমার দাবি জানাচ্ছি। আপনারা শুধু রাস্তায় আমাদের চরিত্র দেখেছেন, কিন্তু আমাদের ভালো কাজগুলো দেখেননি। আমাদের মধ্যেও ভালো মানুষ আছে। জাতীয় সংসদে যদি আমাদের প্রতিনিধি থাকে, তাহলে আমাদের কথা আমরাই বলতে পারবো। আমরা আমাদের কথা বলতে চাই।
পার্টি অব বাংলাদেশের সভানেত্রী ইভানা আহমেদ কথা বলেন, যেহেতু সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, সেহেতু আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশের জন্য কিছু করবো, কিছু করছি, তবে আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম চাই।
হোপ অ্যান্ড পিচ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নৃত্যশিল্পী রানী চৌধুরী বলেন, জাতীয় সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। একজন মহিলা তার বিষয়ে কথা বলছে, একজন পুরুষ তার বিষয়ে কথা বলছে। কিন্তু আমরা আমাদের কথা বলতে পারছি না। যদি জাতীয় সংসদে আমাদের একজন প্রতিনিধি থাকে তাহলে, আমরাও আমাদের কথা বলতে পারতাম। আমাদের অধিকার নিয়ে আইন বা বিল পাস করতে পারতাম।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ইশরাত পারভীন বলেন, মানুষ হিসেবে সবার অধিকার সমান। সবার সমান অধিকার পাওয়ক উচিত। নারী, পুরুষ, হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডারের ভেদাভেদের সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও হিজড়ারা যে মানুষ সেই স্বীকৃতিটাই তারা অনেক সময় পাচ্ছে না। হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডাররা জাতীয় সংসদে যেতে চায়। এটি একটি যুগপোযোগী চিন্তা। জাতীয় সংসদে যদি তারা পৌঁছাতে না পারে, তাহলে তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ থাকবে না। তাদের সমস্যা তুলে ধরার কেউ থাকবে না। তাই জাতীয় সংসদে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষিত আসন প্রয়োজন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সুস্থ জীবনের সাধারণ সম্পাদক ববি হিজড়া, পদ্মকুড়ি হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক মিতু হিজড়া ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিষ্টি চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
এসসি/জেএইচ