নীলফামারী: নীলফামারীর ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ সড়ক সোজা ও প্রশস্ত করায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসংখ্য অবৈধ অবকাঠামো। বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা থাকলে সেই জমি রাস্তার কাজে অধিগ্রহণ করলে বেশি টাকা দেবে সরকার।
এসব ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী আর রডের পরিবর্তে বাঁশ। ইটের গাঁথুনিতে সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাদা-মাটি। রাস্তার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব অবকাঠামো।
নীলফামারীর ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ সড়ক ধরেই ডোমারের বোড়াগাড়ি হয়ে চিলাহাটি পৌঁছানোর অন্যতম পথ এটি। আবার এ পথে যাওয়া যায় দেশের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা পঞ্চগড়ের ভাউলাগঞ্জে। তবে সড়কটিতে অসংখ্য বাঁক থাকায় আর সড়কটি সরু হওয়ায় সোজাকরণ ও প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে সড়কের দুই পাশে ৮৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেজন্য ৪ ধারার নোটিশ দেওয়া হয় জমির মালিকদের। নোটিশ পাওয়ার পরও কিছু অসাধু মহল বেশি দামে জমি কিনে তৈরি করছে অসংখ্য ভবন আর দোকানপাট।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, ৪৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিগত ২০১৯ সালে বোড়াগাড়ী-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ও ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ শুরু না হওয়ায় থমকে আছে সড়কের কাজ। এ কাজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে।
এদিকে ভবিষ্যতে চিলাহাটি স্থলবন্দরে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ৭০ ফুট। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে আটকে আছে ভূমি অধিগ্রহণ। অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ দেওয়া এ ৭০ ফুট জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ অবকাঠামো। যাতে অধিগ্রহণ মূল্য বেশি পাওয়া যায়।
তবে অনেকে বলছেন, টাকার জন্য নয়, বরং বাড়ি করার অন্য জমি না থাকায় তারা স্থাপনা বানিয়ে জমি দখলের রাখার চেষ্টা করছেন।
ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের মো. বেবিনুর রহমান বলেন, আমার বাড়ির সম্পূর্ণ জমি চলে গেছে রাস্তায়। এখন আমরা কোথায় যাব? এখন বাড়ি করার মতো জমি কোথায় পাব?
একই গ্রামের সেলিম সরকার বলেন, আমাদের এখানকার প্রায় ১৫-২০ পরিবারের ঘর-বাড়ির জমি রাস্তায় চলে গেছে। আমাদের আর কোনো জমি নাই, তাই আমরা অন্যত্র চলেও যেতে পারছি না।
বোড়াগাড়ী এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, সরকার জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ দিয়েছে। নোটিশ পাওয়ার পর সেই জমিতে অসংখ্য অবৈধ ঘর-বাড়ি, দোকানপাট গড়ে উঠেছে। যা আগে ছিল না। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ। তারা আসলে চান না, সড়কটি প্রশস্ত হোক। এ কাজের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত।
নীলফামারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, ভাউলাগঞ্জ থেকে বোড়াগাড়ী পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত ১২ ফুট। এখন রাস্তাটি ১২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮ ফুট প্রশস্ত করা ও সোজা করার জন্য ৪৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দে ২০১৯ সালে কাজ শুরু করা হয়। কাজ চলছে। এ কাজের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে। বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কটি আঁকাবাঁকা থাকায় রাস্তা সোজা করা হবে। অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়াধীন জমিতে অসংখ্য অবৈধ অবকাঠামো গড়ে উঠেছে বলে শুনেছি। সেগুলো অপসারণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২৩
এসআই