ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ৪০ বছর পর সুতিভোলা খাল দিয়ে নৌকায় চড়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাতায়াত করছি। এটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, আধুনিকভাবে খালের পাড় বাঁধানো হবে, সবুজায়ন করা হবে। পাড় দিয়ে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেন নির্মাণ করা হবে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সুতিভোলা খাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএনসিসি মেয়র স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সাতারকুল ব্রিজের নিচ থেকে নৌকায় চড়ে সরেজমিনে সুতিভোলা খাল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাতারকুল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এলাকাবাসীর সঙ্গেও মতবিনিময় করেন তিনি।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি আজ সুতিভোলা খালে নৌকায় চড়েছি। স্থানীয় লোকজন আমাকে জানালো দীর্ঘ চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে এ ঐতিহ্যবাহী সুতিভোলা খাল দিয়ে নিয়মিত নৌকা চলতো। কারওয়ান বাজার থেকে মালামাল নিয়ে মানুষ এ খাল দিয়ে নৌকায় করে যাতায়াত করতো। আজ আবার দীর্ঘ সময় পরে আমি এ খালে নৌকায় চড়লাম।
তিনি বলেন, সাতারকুল ব্রিজের নিচ থেকে সুতিভোলা খালে কাউন্সিলরদের নিয়ে নৌকায় চড়ে দেখলাম মানুষ কীভাবে ময়লা ফেলে খালটিকে নোংরা করেছে। খালের পাড়ে ময়লায় ভরপুর। সিটি করপোরেশন থেকে ফ্লোটিং এক্সকেভেটর দিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। আবার খালের ভেতর বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরি করে মাছ চাষ করছে। এগুলো কারা করছে? এভাবে খাল দখল করে বাড়ি যা খুশি তাই করা যাবে না। খালের সীমানা ছেড়ে মাছ চাষ করেন। জনগণের খাল ব্যবহার করে মাছ চাষ করা যাবে না। এগুলো সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিচ্ছি। নিজেরা না সরালে ম্যাজিস্ট্রেট কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে বাড়ির সামনে খাল বা লেক রাখে। আমাদের এখানে খালকে বাড়ির পেছনে ফেলা হয় পরবর্তীতে সেই খাল ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, খাল পরিষ্কার থাকলে মশা জন্মাবে না। মানুষ স্বস্তি পাবে। এজন্য জনগণকে সতর্ক হতে হবে। আর কেউ যেন খাল দখল না করে। আমরা আজ কচুরিপানা পরিষ্কার করে দিলাম। নতুন করে যেন কেউ দখল না করে। সেজন্য ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা আছে। খাল রক্ষায় এলাকাবাসীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমরা খাল নিয়ে মাস্টার প্ল্যান করছি। এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) আমাদের খালের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। আজকে এডিবির একজন কনসালটেন্ট আমাদের সঙ্গে পরিদর্শনে এসেছেন। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে নৌপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুতিভোলা খালে নৌপথ চালু হবে। এছাড়াও মিরপুর রূপনগর খাল হয়ে তুরাগ নদী পর্যন্ত নৌপথ চালু হবে। এক্সপার্টদের সঙ্গে আলাপ করছি কীভাবে সব নৌপথে সংযোগ সৃষ্টি করা যায়। অনেক বাজেট প্রয়োজন। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলাপ করছি। আশা করছি জনগণের সহযোগিতায় দ্রুতই কার্যক্রম চালু করতে পারবো।
মেয়র বলেন, আমরা শহরকে যতই পরিষ্কার করি না কেন, জনগণ যদি যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ না করে তাহলে শহর পরিষ্কার রাখা সম্ভব না। জনগণের নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাল পরিষ্কার রাখতে হবে, দখলমুক্ত রাখতে হবে। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের দায়ী করবে। কেউ যেন খালে ময়লা না ফেলে এ ব্যাপারে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। যারা যত্রতত্র ময়লা ফেলে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাছিমা খানম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
এমএমআই/আরআইএস