ঢাকা, বুধবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কালকিনিতে কৃষি জমি নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণ

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
কালকিনিতে কৃষি জমি নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণ

মাদারীপুর: জেলার কালকিনিতে ব্যক্তিগত কৃষি জমি নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। রাস্তার কাজে মাটি নেওয়ায় ফসলি জমিতে তৈরি হচ্ছে খাল।

চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করতে না পারায় ক্ষতির মুখে চাষিরা।  

কৃষকদের অভিযোগ, মাটি ভরাটে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি! এ কাজে বাঁধা দেওয়ায় ঠিকাদারের লোকজন হুমকিও দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপণ করার কথা, সেই জমি এখন পানিতে নিমজ্জিত। ফলে ব্যাহত হয়েছে চাষাবাদ। রাস্তা নির্মাণে ব্যক্তিগত ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করায় চলতি মৌসুমে চাষাবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন চাষিরা। ক্ষতির মুখে কৃষক শাহ আলম হাওলাদার, মিলন আকন। তার জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে সড়ক নির্মাণে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে চাষাবাদ। একই অবস্থা কালকিনির বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পরিপত্তর গ্রামের কৃষক মুজাফফর আকন, মোশারফ আকনসহ ১৫-২০ জন চাষির।  

কৃষকদের অভিযোগ, শুধু ফসলি জমিই নয়, ব্যক্তিগত শত শত গাছপালা কেটে ফেলে হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে। বাঁধা দিলে মামলা আর হামলার হুমকি দিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাবুল আকন। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ কৃষক নেতারা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কালকিনি কার্যালয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমএসআরডিপি) আওতায় মাদারীপুর-শরিয়তপুর-বরিশাল জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পে ১২০০ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। যেখানে মাটি ভরাটে ব্যয় ধরা হয় ১৫ লাখ টাকা। পিরোজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএফটিই-ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে গত বছরের আগস্টে শুরু হওয়া প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের আগস্টে।

কৃষক শাহ আলম হাওলাদার বলেন, নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। আমার জমির শতাধিক গাছ কেটেছেন ঠিকাদারের লোকজন। আর ফসলি জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তায় দিয়েছেন। বাঁধা দেওয়ার পরও আমার কথা মানেনি। বাবুল আকন নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটেছেন। এখন বোরো আবাদের সময়, কিন্তু জমিতে পানি থাকায় চাষাবাদ করতে পারছি না।

ভুক্তভোগী মিলন আকন বলেন, সরকার থেকে একটি রাস্তা বরাদ্দ হয়েছে। রাস্তা নির্মাণে কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু রাস্তার কাজে মাটি ব্যবহার বাইরে থেকে আনার কথা। অথচ, আমাদের কৃষকের জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে ঠিকাদার। আমাদের নিজস্ব জমি নিয়ে রাস্তা নির্মাণ, সেটা তো টেন্ডারে নেই, আমরা এর প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

আরেক কৃষক মুজাফ্ফর আকন বলেন, কৃষকরা তো এমনিতেই অসহায়। ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় হুমকি-ধামকির শেষ নেই। জোরপূর্বক ফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়ার পাশাপাশি গাছপালা কর্তনও করা হয়েছে। এর ক্ষতি পূরণ চাই, মাটি ভরাটও চাই।

মাদারীপুর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই দিনে দিনে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। তারপরও কৃষকের জমি থেকে মাটি রাস্তা নির্মাণ এটা গুরুতর অপরাধ। আবার কৃষকদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আবেদন, এ ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ঠিকাদারের প্রতিনিধি বাবুল আকনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  
তবে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এলজিইডির কালকিনি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, এলাকার মানুষকে ম্যানেজ করে মাটি ব্যবহার করতে পারেন ঠিকাদার। কিন্তু ফসলি জমি নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণ করার বিষয়টি আমাকে কয়েকজন অবগত করেছেন। এলাকার মানুষের ক্ষতি করা যাবে না। আমি ঠিকাদারকে বলে দিয়েছি বিষয়টি সমাধান করতে।

কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ জানান, কৃষি জমি এভাবে নষ্ট করার এখতিয়ার কারোরই নেই। উপজেলা প্রকৌশলীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।