খুলনা:খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৩ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯১ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৬৭ লাখ ২০৫ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা বিভাগের মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা চার হাজার ৯৮৪ টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩০ হাজার দুইশত ৫৩টি। খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর এসব তথ্য জানান।
এ নির্বাচন কর্মকর্তার তথ্য মতে, খুলনা বিভাগে মোট ৮৭ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার। যার মধ্যে খুলনায় ১৪, বাগেরহাটে ৮,সাতক্ষীরা ১২,যশোর ১৫, নড়াইল ৩, ঝিনাইদহ ১২, চুয়াডাঙ্গা ৮, কুষ্টিয়া ৮, মেহেরপুর ২ ও মাগুরায় ৫ জন। এ পরিসংখ্যান নিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তারা বলছেন, ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়া ‘লিঙ্গ পরিচয়’কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। ২০১৪ সালের ভোটার নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়নের সময়ই নির্বাচন কমিশন ‘হিজড়ার অপশন’ প্রস্তাবিত নিবন্ধন ফরমে যুক্ত করে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় খুলনা বিভাগের হিজড়া ভোটারদের সঠিক পরিসংখ্যান নয়। মাঠ পর্যায়ে যারা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছেন তারা শুধু নাম দেখে নারী কিংবা পুরুষ বিবেচনা করেছেন।
যশোরের অর্পণ মানব কল্যাণ সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. রুবাইদুল হক জোয়ার্দ্দার বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় প্রকাশিত খুলনা বিভাগের হিজড়াদের পরিসংখ্যান সঠিক নয়। খুলনা বিভাগে মাত্র ৮৭ জন হিজড়া ভোটার নন। অধিকাংশ ভোটারের নাম তালিকায় উঠে আসেনি।
খুলনার নক্ষত্র যুব মানব কল্যাণ সংস্থার সভাপতি পাখি দত্ত হিজড়া বাংলানিউজকে বলেন, যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে আমাদের জনগোষ্ঠীর সঠিক জরিপ করা হয়নি। এজন্য আমি অবশ্যই ক্ষোভ প্রকাশ করছি। এর কারণ হচ্ছে যারা জড়িপে এসেছেন তারা জানেন না আমাদের অনেকের নামে ভুল আছে। ফর্মের নাম দেখে তারা জরিপ করেছেন। কিন্তু জেন্ডারের ঘরে দেখেননি যে সেখানে নারী কিংবা পুরুষের ঘর নয় অন্যান্য ঘরে টিক দেওয়া। নাম দেখে তো হিজড়া চেনা যায় না। আমার নাম যেমন পাখি দত্ত হিজড়া। এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন দেখে তারা জরিপ করে গেছেন। কিন্তু জন্মনিবন্ধ বা এনআইডি করার সময় প্রথম দিকে তো নারী পুরুষের পাশাপাশি অন্যান্য এর ঘরটি ছিল না। এখন হয়েছে। ঘরটা থাকা সত্ত্বেও এখন ঘরটা দেখা হচ্ছে না নামটা দেখা হচ্ছে। এজন্য জরিপে আমাদের সংখ্যা ভুল এসেছে। এছাড়া যখন বাড়িতে এসে জরিপ করা হয়েছে তখন বাবা মা বলেছেন তার সন্তান চারটি, ২টি কিংবা ৩টি। তাদের কাছে কিন্তু জিজ্ঞাসা করা হয়নি তাদের মধ্যে হিজড়া বা প্রতিবন্ধী আছে কিনা।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের জরিপ অনুযায়ী মাত্র ৮৭ জন হিজড়া ভোটার খুলনা বিভাগে। খুলনা জেলায় ১১৩ জন হিজড়া রয়েছে। তাহলে বিভাগে তো অনেক। যারা জরিপ করতে এসেছেন তাদের প্রতি নিন্দা জানাচ্ছি। তারা এমন ভুল জরিপ করে আমাদের অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন। আমাদের জনগোষ্ঠীর সবাই নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যাবে। কিছু দিন আগে কেসিসি নির্বাচন হলো তখনও আমরা সবাই ভোট দিয়েছি। নারীদের লাইনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভোট দিতে হয়েছে। তারা আমাদের দেখে বিব্রত হয়েছেন। যা আমাদের খারাপ লেগেছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে আমাদের নিজস্ব সত্ত্বা নিয়ে যদি বাঁচতে না পারি তবে সেটা দুঃখ ও লজ্জাজনক।
হিজড়াদের জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি খুলনার ডিভিশনাল কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বন্ধু খুলনা যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় যে সমস্ত হিজড়া ট্রানজেন্ডার জনগোষ্ঠী আছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করে সেখানে দেখা যায় প্রায় ৮০০ অধিক হিজরাও ট্রানজেন্ডার জনগোষ্ঠী রয়েছে এ তিন জেলায়। এর বাদেও এ জনগোষ্ঠীর লোক এ জেলাগুলোতে রয়েছে কিন্তু তাদের ভোটার আইডি কার্ড অন্য জেলার যার কারণে তাদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।
মূলত কয়েকটি কারণে ভোটার আইডি কার্ডে তাদের পরিচয়টা ফুটিয়ে তুলতে পারেনি কারণ ১. অনেকের নাম আলামিন দেখতেও সে পুরুষের মতো কিন্তু বাস্তবে সে নারীদের মতো চালচলন ও পোশাক কথাবার্তা ও সাজ সজ্জা করে কিন্তু ভোটার আইডি কার্ডে সে পুরুষ হিসেবেই চিহ্নিত রয়েছে ২.অনেক বাবা-মা চান না যে তার সন্তান হিজড়া বা ট্রানজেন্ডার এটা সামাজিকভাবে সবাই জানুক তাই তারা নিজেরাই সন্তানকে আইডি কার্ডে পুরুষ অথবা নারী এ কোটাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে ৩.সরকার তাকেই তৃতীয় লঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিবে যার শারীরিকভাবে সমস্যা রয়েছে এবং সেটি চিকিৎসক নিশ্চিত করবেন কিন্তু বাস্তবতা হলো এ সমস্যাটি ট্যানজেন্টার কমিউনিটির অনেকেরই শরীরের চাইতে মনে বেশি যার কারণে আমরা যদি তাদের কথা ভাবতে চাই তাহলে তাদের এ মানসিক যে পরিবর্তন ভেতরে সেটিকে শরীরের চাইতে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
এমআরএম/জেএইচ