রাজশাহী: অল্পের জন্য ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেল রাজশাহীর সবচেয়ে ব্যস্ততম আরডিএ মার্কেট। সোমবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরডিএ মার্কেটের সবচেয়ে পুরোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘এক নম্বর গদির’ দোতলার গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের পরপর ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় পুরোপুরি আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভাতে এবং ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে।
এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আর অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সামা।
আবু সামা বলেন, ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদেরকে জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ আরডিএ মার্কেটের ১ নম্বর গদির দোতলায় তারা আগুন দেখতে পান।
মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো গোডাউনে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এ সময় আরডিএ মার্কেটের গেটের সামনের ডানপাশে থাকা এক নম্বর গদির আশপাশের দোকান ব্যবসায়ীদের ভেতরেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোটের পরদিন মার্কেটে লোকজন কম থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে গোডাউনের আগুন দ্রুতই বড় হতে থাকে। এরপর তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু সামা বলেন, তাদের কন্ট্রোলরুমে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর আসে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিট আগুন নেভাতে আরডিএ মার্কেটের ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এরপর এক এক করে আরও ৮টি ইউনিট পৌঁছে তাদের মোট ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়।
আর আরডিএ মার্কেটটি কাছে হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুতই ঘটনাস্থলে আসতে পারেন এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হন। তাই ওই ভবন ছাড়া অন্য কোনো দোকান বা পুরো মার্কেটে আগুন ছাড়িয়ে পড়তে পারেনি। এতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড এবং হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। কারণ মার্কেটের দক্ষিণ পাশের দোকানগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই গ্যাসসহ বিভিন্ন ধরনের চামড়াজাত ও বস্ত্রপণ্যের ছিল। এর মধ্যে কেবল এক নম্বর গদির গোডাউন ঘরটিই আগুনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এটি রাজশাহী মহানগরের সবচেয়ে পুরোনো মুদি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়ে থাকে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তদন্তের পর তা জানা যাবে বলেও উল্লেখ করেন, এই কর্মকর্তা।
এদিকে রাজশাহীর ১ নম্বর গদির স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন জানান, তার ১ নম্বর গদির দোতলার গোডাউনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে আগুনে সব মালামাল পুড়ে গেছে। কিন্তু কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত নন।
আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) ওহিদুল ইসলাম জানান, ১ নম্বর গদির দোতলার গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ওই ঘরে একটি রান্নাঘরও ছিল। সেখানে রান্না করে খাওয়া হয়। এখন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে না রান্নাঘরের চুলা থেকে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়েছে। আগুন কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও ভেতর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হচ্ছিল। তাই পুরো পুরোপুরি ডাম্পিংয়ের কাজ শেষ করতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নেভানোর কারণে পুরো আরডিএ মার্কেটে আগুন ছাড়াতে পারেনি। এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি থেকে পুরো মার্কেটটি রক্ষা পেয়েছে। তদন্তের পর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন, ফায়ার সার্ভিসের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জানার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের স্বান্তনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৪
এসএস/এএটি