ঢাকা: ফুডগ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, ডিসিফুড ও আরসিফুডের অফিসারদের আবারও বলছি যে সকল ব্যবসায়ীর ফুডগ্রেইন লাইসেন্স নাই তাদের সিলগালা করে সেখানকার পণ্য সরকারি গুদামে নিয়ে আসতে হবে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ধান-চালের বাজার ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ডিসিফুড ও আরসিফুড অফিসারদের কয়েক মাস ধরে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। এটা আমার ফাইনাল নির্দেশনা। কাল থেকেই ফুডগ্রেইন লাইসেন্স চেক করা হবে ব্যবসায়ীদের। সেটা খুচরা, পাইকারি, আড়ৎদার, ধান ক্রেতা যে-ই হোক সকল ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সব ব্যবসায়ীদের ফুডগ্রেইন লাইসেন্স থাকতে হবে। এই লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না। এক্ষেত্রে কি কি কাগজ প্রয়োজন সেটা তাদের দিয়ে আসতে হবে। সাত দিন পর স্পটে গিয়ে লাইসেন্স দিয়ে আসতে হবে। আপনাদের পেছনে ব্যবসায়ীরা ঘুরবে না। একই সঙ্গে সাতদিনের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কোন কোন মিলে ধান বিক্রি করেছে সেটার ইনভয়েসের কপিসহ রিপোর্ট দাখিল করবে স্ব স্ব উপজেলা অফিসে। আর প্রত্যেকটি উপজেলা কর্মকর্তাকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। সামনে যে চ্যালেঞ্জ সেটা মোকাবিলা সকলকে একসাথেই করতে হবে।
ফুডগ্রেইন লাইসেন্সকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইসেন্স না থাকলে যে কেউ অবৈধভাবে মজুদ করতে পারে। আর লাইসেন্সের শর্তই হলো, সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক রিপোর্ট দিতে হয়। মাসিক রিটার্ন দিতে হয়। তাহলে আমরা বুধতে পারব সারা দেশে কোথায় কত ধান আছে এবং আমাদের প্রয়োজন আছে কিনা। আর অবৈধ মজুদ যদি কেউ করে সেটা ফুডগ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া বোঝা যায় না। এজন্য এই লাইসেন্স প্রয়োজন।
লাইসেন্স না থাকলে কি ব্যবস্থা নিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইসেন্স না থাকলে তো বুঝতে পারবো না কোথায় কতটুকু মজুদ আছে। আজকে অভিযানে ৩ হাজার মন ধান মজুদ করেছিল এক মজুদকক্ষ সিলগালা করা হয়েছে, মামলা হবে।
অবৈধ আড়তদারদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, যারা হাজার-হাজার মন ধান আড়তদারির নাম করে বিনা লাইসেন্সে স্টক করছে, সেক্ষেত্রে কিন্তু ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আপনি মিল মালিক হয়ে যদি আপনার কাছে থাকে, আপনাকেও ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আমার বাবা হলেও উপায় নেই। আমার নির্বাচনী এলাকায় এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপারেশনে আছে। ব্যবসায়িক সূত্র বা ইকনোমিকস থিওরিতে বলে যখন চাহিদা বেশি হয় তখন দাম বাড়ে, সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। আমি তো এই মুহূর্তে কোনো সরবরাহ কমের অবস্থা দেখছি না। প্রচুর ধান আছে। সরবরাহ যদি না কমে যায় তার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়ে আমরা আমদানি করার চেষ্টা করছি, মানে আমাদের ফাইল প্রসেসে আছে। হয়তো আমরা এটা ২-৪-৫ দিনের মধ্যে ফাইনাল করব। কারণ, অযথা স্টক করে রেখে পরে আবার বলবেন, আমরা মরে গেলাম, মরে গেলাম। এ কথা যাতে না শুনি।
তিনি বলেন, একদিকে অভিযান, আরেকদিকে আপনাদের বিবেক, আরেকদিকে আমাদের আমদানি পদ্ধতি, প্রয়োজনে সরকারিভাবে আমদানি, দরকার হলে আমরা ওএমএস থানায় থানায় ছেড়ে দেব কিন্তু বাজার বাড়তে দেওয়া যাবে না। এটা আপনারা আমার সাথে একমত কিনা, একমত হলে হাত তোলেন; এ সময় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা বলে ওঠেন, একমত।
মন্ত্রী বলেন, তাহলে কাল থেকে বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমি কিন্তু আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করলাম। চালের দাম বৃদ্ধি করার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। কারণ, আমনের ভরা চালের মৌসুম, আমন চালের দাম বৃদ্ধি পাবে না এটাই হলো মূল কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪
জিসিজি/এমজে