ঢাকা: নির্বাচনের পর হঠাৎ করে রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়তে থাকে সব ধরনের চালের দাম। এ অস্থিরতা কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান শুরু করা হয়।
আড়তের দাম কমলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭০, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৭৮, স্বর্ণা (গুটি) ৪৮ থেকে ৫০, স্বর্ণা (পাইজাম) ৪৮ থেকে ৫০ ও মোটা আটাশ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পূর্ব রাজাবাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৯০, মিনিকেট ৭৫, আটাশ ৬০ ও স্বর্ণা (গুটি) ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৫, ভালো মানের নাজিরশাইল ৭৪ থেকে ৭৫, নিম্নমানের নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৬, আটাশ চাল ৫০, স্বর্ণা (গুটি) ৪৭, স্বর্ণা (পাইজাম) ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। নির্বাচনের পর হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় চালের দাম। এর জন্য মিল মালিক ও মজুদদারদের দায়ী করছেন তারা।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, সরকারের অভিযানের পর আড়ৎ থেকে চালের দাম বস্তা প্রতি ৫০ টাকা কমানো হয়েছে। কেজিতে কমেছে এক টাকা। যে কারণে খুচরা বিক্রেতা চালের দাম কমার কোনো প্রভাব পড়েনি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের অভিযানের কারণে আড়তে চালের দাম বস্তায় ৫০ টাকা কমেছে ঠিকই। কিন্তু দাম বাড়ানোর সময় বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাই খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কমেনি বললেই চলে। কারণ, বাড়ার সময় দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা, আর কমেছে মাত্র এক টাকা।
তিনি আরও বলেন, মাসের শেষ দিকে বিক্রেতারা এমনিতেই চালের দাম দুয়েক টাকা কম রাখেন। এ সময় বিক্রেতারা লাভ ছেড়ে দেন। তাই কেজিতে এক টাকা দাম কমা বা না কমা একই কথা।
একই কথা বলেন পূর্ব রাজাবাজারের মুদি দোকানদার মো. খোকন। তিনি বলেন, কেজিতে ১ টাকা কমেছে চালের দাম। এই টাকা আমরা ক্রেতাদের এমনিতেই ছাড় দেই। আমরা আড়ৎ থেকে চাল কিনে এনে দুয়েক টাকা লাভ করে বিক্রি করি। চালের ভরা মৌসুমে দাম কেনে বেড়েছে জানি না।
বাজারে অস্থিরতা কমাতে সরকারের চাল আমদানি করা উচিৎ বলে মনে করেন বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা মো. শাহজাহান বলেন, ভরা মৌসুমে মিল মালিকরা চাল মজুদ করায় দাম বেড়েছে। সরকারের উচিৎ চাল আমদানি শুরু করা। তাহলেই চালের দাম কমে যাবে। আর বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোকে চালের ব্যবসা থেকে সরিয়ে নিলে চালের বাজারের অস্থিরতা কমবে। তাদের কারণে চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
জুবায়ের নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, চালের দাম আগের মতোই বাড়তি। শুনেছি বস্তায় নাকি ৫০ টাকা কমেছে। তবে আমরা এখনও সেই চাল পাইনি। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছি।
মনোয়ার হোসেন নামে আরেক খুচরা চাল বিক্রেতা বলেন, বাড়ার সময় বস্তায় বেড়েছে ৪০০ টাকা আর কমেছে মাত্র ২০-৩০ টাকা। কেজিতে যা এক টাকারও কম। তাই খুচরা বিক্রিতে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না।
চালের বাজারের এমন অস্থিরতায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে চালের দাম বাড়ায় জীবন চালাতে হিমশম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।
প্রদীপ গোমেজ নামে এক ক্রেতা বলেন, খবরে দেখেছি মজুদদাররা চাল ধরে রেখে দাম বাড়িয়েছে। আমরা সাধারণ ক্রেতারা তো অসহায়। সরকারও তাদের কিছু করতে পারছে না। ফলে বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে। কিছুই করার নেই, খেতে তো হবে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছি। উচ্চ বিত্তদেরই জীবন চালাতে কষ্ট হচ্ছে, নিম্নবিত্তদের কথা চিন্তা করার জো নেই।
সজীব নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এদেশে যেটার দাম একবার বাড়ে সেটি আর কমে না। বাড়তি দামেই পণ্য কিনে আমাদের জীবন চালাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
এসসি/এমজে