ঢাকা: তৈরি পোশাকশ্রমিকদের গ্রেড বৈষম্য, শ্রমিক ছাঁটাই ও টার্গেটের চাপ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। পাশাপাশি শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং চার নিহত শ্রমিকের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। সমাবেশ শেষে দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সদ্য জামিনে কারামুক্ত সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহ-সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর সাহা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক হযরত বিল্লাল শেখ, কেন্দ্রীয় নেতা ও রানা প্লাজা শাখার নেতা রুপালি আক্তার, নারী বিষয়ক সম্পাদক শাহীদা আক্তার প্রমুখ।
কারামুক্ত শ্রমিকনেতা বাবুল হোসেন বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করার কারণে সর্ম্পূণ মিথ্যা মামলায় আমাকেসহ শতাধিক শ্রমিক এবং নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো দিন কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। আন্দোলনে যুক্ত ছিল না এমন শ্রমিকদেরও ঘুমের মধ্য থেকে তুলে গ্রেপ্তার করা হয় এবং শ্রমিক এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সকল নেতা ও শ্রমিকদের ওপর চাপানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে জামিনে মুক্ত হওয়া সকল শ্রমিককে কারখানায় কাজে বহাল করতে হবে, তাদের পাওনা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি পোশাকশ্রমিকরা চলতি জানুয়ারি থেকে পেতে শুরু করেছে। প্রাপ্তির শুরুতেই শ্রমকিরা আরকে দফা সংকট এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছে। একে তো ৫ বছর পর মজুরি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়েনি। শ্রমিকরা ২৫ হাজার টাকা দাবি করলেও নির্ধারিত হয়েছে ১২৫০০ টাকা, যাতে এই বাজারে চলা কঠিন। ইতোমধ্যে নির্ধারিত মজুরিও বিভিন্ন কারখানায় কার্যকর হয়নি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে যোগ হয়েছে, গ্রেড ভেদে শ্রমিকদের ঠকানোর ব্যবস্থা। গ্রেড কমানোর কথা বলে মালিকরা ৪র্থ গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়িয়েছে, সেই সমানহারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে বৃদ্ধি না করে ইচ্ছামতো মজুরি দিচ্ছে। ফলে জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কয়েক বছর ধরে কাজ করা শ্রমিকদের গ্রেডে এমনিতেই ইনক্রিমেন্টের কারণে বৃদ্ধি পায় মজুরি। কিন্তু ঘোষিত মজুরির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়েনি মজুরি।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সকল গ্রেডে জ্যেষ্ঠতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সমান হারে সকল গ্রেডে মজুরি বৃদ্ধির নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সাথে একদেশে দুই মজুরি দুই আইনের (ইপিজেড ও ইপিজেডের বাইরে কারখানায়) সমালোচনা করে সকল শ্রমিকের জন্য সমান আইন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানান।
তাসলিমা আখতার আরও বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করার কারণে শ্রমিক গ্রেপ্তার মামলা-নির্যাতনেই মালিকরা থেমে থাকেনি। শুরু হয়েছে বিভিন্ন কারখানায় ছাঁটাই, টার্গেটের ভয়াবহ চাপ এবং বিনা ওভারটাইমে খাটানো বা ‘ফাও’ খাটানো। মজুরি বৃদ্ধির সাথে কাজের চাপ বৃদ্ধিতে অমানবিক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। শ্রমিকরা শারীরিকভাবেও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং অধিক পরিশ্রম এবং ক্লান্তিজনিত অসুস্থতায় ভুগছে। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধি এবং মজুরি প্রাপ্তি শুরুর সাথে সাথে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে আশুলিয়া, গাজীপুরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ইপিজেডে যেটি শ্রমিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
টার্গেটের চাপ বৃদ্ধি, ছাঁটাই নির্যাতন বন্ধ করে ভয়মুক্ত সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতারা। তারা বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে মোট চারজন (আঞ্জুয়ারা, রাসেল, ইমরান, জামাল উদ্দীন) প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের বদলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪
এমজেএফ