ঢাকা: বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ, আওয়ামী লীগ সরকার ও আওয়ামী লীগ সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল, আছে এবং থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে ‘ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও শান্তির অন্বেষা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
হাছান মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের বক্তৃতায় ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের (বাংলাদেশ) দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কথা বলেছেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্যেই সমস্যা বা সংকটের সমাধান যে নিহিত, তা তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। আমরা সব সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং থাকব।
তিনি বলেন, শুধু সরকার নয়, আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থেকেছে এবং ফিলিস্তিনিদের পাশে আমরা আছি, তা আমরা বারবার ব্যক্ত করেছি। ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু গণহত্যা নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ।
ইসরায়েলের অভিপ্রায় স্পষ্ট উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে ফিলিস্তিনিশূন্য করতে চায়। সেখানে তাদের আজ্ঞাবহ সীমিত কিছু মানুষ যাতে বসবাস করে, তারা সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, পৃথিবীর সব আইন-কানুন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আজ ইসরায়েল সেখানে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। এভাবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ একবিংশ শতাব্দীতে হবে, কল্পনা করা যায় না। যখন মানুষ চাঁদে গেছে, মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার চেষ্টা করছে, মানুষ যখন মহাশূন্য বিজয় করতে চাচ্ছে, তখন পৃথিবীতে মানুষ হত্যার মহোৎসব চলছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিপক্ষে মিছিল হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশে অনেক ইসলামি দল আছে। তারা এ নিয়ে সোচ্চার হবে আশা করেছিলাম। কিন্তু তারা হয়নি। শুধু এ বিষয়ে একটি সমাবেশ-মিছিল করতে দেখিনি। আরও অনেক কিছুর মধ্যে এটিকে জুড়ে দিয়েছে। সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন এগুলোই তাদের কাছে মুখ্য। শুধু ফিলিস্তিন নিয়ে কোনো সমাবেশ কেউ করেনি। এটি দুঃখজনক হলেও সত্য। অথচ আমাদের দলের (আওয়ামী লীগ) দলের নারী কর্মীরা এ নিয়ে সমাবেশ করেছেন।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে আজ জঙ্গিবাদের উত্থান, ফ্যানাটিজমের উত্থান, নিরাপত্তা সমস্যা ইত্যাদি অনেক কমে যেতো, যদি ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতো। ফিলিস্তিনিদের দমন করতে গিয়ে বা ইসরায়েলের পক্ষে থাকতে গিয়ে যে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বা যে অন্যায় হচ্ছে, সে কারণে অনেক বিক্ষুব্ধ মানুষ আরব রাষ্ট্রগুলোতে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা মৌলবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এটি আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার সবসময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছে এবং থাকবে। শেখ হাসিনার সরকার এবং তার দল মনে করে, ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অন্য কোনোভাবে নয়। আশা করব, যারা ইসরায়েলের পক্ষে মাঝে মাঝে কথা বলেন, যাদের এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার, তারা আরও সোচ্চার হবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমি সবসময় নির্যাতিতদের পক্ষে। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাও সব সময় নির্যাতিতদের পক্ষে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর গত সংসদে বিশেষ আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অনেকেই বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ আমরা (আওয়ামী লীগ) যখন বিরোধী দলে ছিলাম, বিএনপি সরকারে ছিল, তখন ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংসদে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনতে বলা হয়েছিল, গ্রাহ্য করা হয়নি। স্পিকার ও সংসদ নেতা তা গ্রাহ্য করেননি।
তিনি বলেন, অনেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের দিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের বিপক্ষে একটি শব্দও বিএনপি ও জামায়াত বলেনি। তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। যারা নিজেদের স্বার্থে গণহত্যার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকে, তাদের হাতে দেশের স্বার্থ কখনো নিরাপদ নয়, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভবপর নয়। অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের জয় হবে। বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ, আমাদের সরকার ও দল তাদের পক্ষে আছে এবং থাকবে।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এম এম আকাশ। আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রমাদান, বিচারপতি নিজামুল হক, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম এ সবুর, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, মমতাজ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন, তরুণ গবেষক ড. সঞ্জীব চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এসসি/আরএইচ