ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে ১২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪
ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে ১২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও  পলাতক অভিযুক্ত প্রতারক খোকন চোকদার ও টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন

মাদারীপুর: মাল্টা, পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন নেওয়ার কথা বলে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন এক ব্যক্তি।  

তার নাম খোকন চোকদার, জেলার সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি।

 

স্থানীয়রা জানান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেওয়ার কথা বলে মাদারীপুরের ৩০-৩৫টি গ্রামের শতাধিক যুবকের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন খোকন। এরপর যুবকদের প্রথমে ভারতে পাঠানো। সেখানে গিয়ে যুবকেরা জানতে পারেন, কারোই ভিসা হয়নি। পরে তারা বাড়িতে ফিরে আসেন। এদিকে সব টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেন প্রতারক খোকন।  

টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার পাশাপাশি বার বার প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন, তবুও কাজ হচ্ছে না।  

অভিযোগ উঠেছে, একাধিক মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত খোকন।

জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি পৌরসভার ঝাউতলা গ্রামের বাসিন্দা রেবা বেগম তার ছেলে মেহেদি হাসানকে বিদেশ পাঠানোর জন্য দালাল খোকন চোকদারকে ৭ লাখ টাকা দেন। একইভাবে বালিগ্রামের সুমন হাওলাদার ও মাইনুল হোসাইনও ৭ লাখ টাকা করে তুলে দেন। দুই মাসের মধ্যে বিদেশে নেওয়ার কথা থাকলেও আড়াই বছরেও কেউই যেতে পারেননি। ফলে এসব পরিবারে হতাশা বিরাজ করছে।

তাদের মতোই দক্ষিণ রাজদি, বালিগ্রাম, মোস্তফাপুর, কৃষ্ণনগর, মাইজপাড়া, মাদ্রাসহ ৩০-৩৫টি গ্রামের শতাধিক যুবককে মাল্টা, পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭-১২ লাখ টাকা করে নেয় অভিযুক্ত খোকন।  

ভিসা হয়েছে বলে কয়েক দফা এসব যুবককে নেওয়া হয় ভারতে। পরে যুবকেরা বুঝতে পারেন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তারা।  

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গবাদিপশু বিক্রি, জমি বন্ধকসহ সুদে এনে তারা লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন খোকনের হাতে। বিশ্বাস অর্জন করাতে অসহায় মানুষদের বিভিন্ন ব্যাংকের ব্ল্যাঙ্ক চেক দেন খোকন। অথচ খোকনের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই টাকা নেই। পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করে খোকন। একপর্যায়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এই প্রতারক। পরে আদালত ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী রেবা বেগম বলেন, আড়াই বছর আগে আমার ছেলেকে বিদেশে নেওয়ার জন্য খোকন চোকদারের কাছে ৭ লাখ টাকা দেই। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে মাল্টা পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু আড়াই বছরেও তিনি বিদেশে নিতে পারেননি। এখন তিনি বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। পরে বুঝতে পারি তিনি বড়মাপের প্রতারক।

সুমন হাওলাদার নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, বিদেশে নেয়নি আর আমার পাওনা ৭ লাখ টাকাও ফেরত দেয়নি। পরে আমি টাকা না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু এখনো খোকন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না।

ভুক্তভোগী মাইনুল হোসাইন সুজন বলেন, আমি বিদেশে যাবার জন্য খোকন চোকদারকে টাকা দিই। কিন্তু তিনি বিদেশে নিচ্ছে না আমাকে। আমি দুই বছর ধরে ভুক্তভোগী। আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, বিদেশে গিয়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনব। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। এই প্রতারকের কথায় আমরা একশোর বেশি মানুষ ফাঁদে পড়েছি। ১২ কোটি টাকা বেশি নিয়ে তিনি লাপাত্তা। আমরা পাওনা টাকা ফেরত চাই, পাশাপাশি প্রতারক খোকনের বিচার চাই।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সবুল বিশ্বাস বলেন, কয়েকটি গ্রাম থেকে এভাবে কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা বড়মাপের প্রতারক খোকন। অথচ তিনি এখনও গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। অসহায় গরিবদের পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার সব ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি খোকনের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বিদেশে নেওয়ার কথা বলে অসহায় মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন খোকন চোকদার। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য মতে, কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা খোকন। একাধিক মামলা হয়েছে এই প্রতারকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চলছে। শিগগিরই তাকে আইনের হাতে ধরা পড়তে হবে।

এদিকে অভিযুক্ত খোকন চোকদার গা-ঢাকা দেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।