ঢাকা: দেশে ফেরত প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে একটি চক্র। এ অনিয়মে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, সোমবার এয়ারপোর্টে দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও মানি লন্ডারিংয়ে কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও মানিচেঞ্জারের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
সচিব বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান যে রেমিট্যান্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আনেন, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকাররা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই কিনে মার্কেটে বিক্রয় করে দেন, যা পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পেয়ে এবং সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারির সাথে জড়িত ব্যাংকার ও মানি এক্সচেঞ্জারদের একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
সচিব বলেন, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও ভ্রমণকারী বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তারা তাদের সাথে আনা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে দেশীয় মুদ্রা বা বাংলাদেশি টাকায় এনকেশমেন্ট করে থাকে। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার এনকেশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ওই ব্যাংকার ও মানি এক্সচেঞ্জারদের চক্রটি ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি বিদেশি মুদ্রা নিয়ে বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, এ ছাড়া চক্রটি স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট স্লিপ দেয়। চক্রের সদস্যরা তাদের প্রতিষ্ঠানের মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে বিদেশি মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত করে না। ফলে বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয় না। এতে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়।
দুদক সচিব বলেন, এ অনিয়মের কারণে প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে কেনা ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে বিদেশি মুদ্রাপাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে বলে দুদকের অভিযানে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযানকালে এনকেশমেন্ট স্লিপ ছাড়া বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ, একাধিক ভুয়া ভাউচার ও স্বাক্ষরবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়, পাচার ও কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়।
দুদক সচিব বলেন, সন্দেহভাজন ও জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের মদদদাতা ও সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪
এসএমএকে/আরএইচ