ঢাকা: সীমাহীন চাঁদাবাজি ও জুলুম-নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও তাদের প্রশ্রয়কারী পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন।
একইসঙ্গে সংগঠনটি দাবি করেছে, ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে বাস্তবসম্মত পরিকল্পিত নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সকল রাস্তায় রিকশা চলাচল করতে দিতে হবে বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ থেকে সংগঠনটি এসব দাবি জানায়।
সমাবেশে অংশ নেওয়া রিকশাচালক সেলিম বাংলানিউজ প্রতিবেদককে জানান, কামরাঙ্গীরচরের সোনারঘাট দীর্ঘদিন তিনি রিকশা চালান। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে ওই এলাকার সোহরাবের কাছে থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হয়। এই কার্ড দেখালে পুলিশও ধরে না। আর না থাকলে পুলিশ ধরে, এরাও চালাতে দেয় না।
বক্তারা বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে এত সংখ্যক শ্রমিক এ ধরনের অমানবিক পেশার সঙ্গে যুক্ত নয়। যান্ত্রিক উৎকর্ষতার যুগে উন্নত বিশ্বে যখন পশু দিয়ে অতিপরিশ্রমের কাজ করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়, সেখানে জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ ভারবাহী পশুর জীবন- যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই রিকশার যান্ত্রিকীকরণ একটি আবশ্যিক মানবিক কর্তব্য।
ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স না দেওয়ায় আইনগত সমস্যা হচ্ছে দাবি করে সংগঠনটি বলছে, এই সুযোগে স্থানীয় সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা ট্রাফিক ও পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শ্রমিক ও মহাজনদের উপরে নানা ধরনের জুলুম-নিপীড়ন চালাচ্ছে। কার্ড ও টোকেনের নামে এই চাঁদাবাজি শ্রমিকদের জীবন- জীবিকাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে। ফলে সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, বৃহত্তর লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর অঞ্চলে চাঁদাবাজ সোহরাব, পল্লবীসহ বৃহত্তর মিরপুর অঞ্চলে চাঁদাবাজ মাওরা আড্ডু, মোহাম্মদপুর অঞ্চলে সাংবাদিক পরিচয়ধারী কতিপয় ব্যক্তিসহ সমগ্র ঢাকায় বিভিন্ন চাঁদাবাজরা প্রতি মাসেই কোটি কোটি টাকার অবৈধ চাঁদাবাজি করছে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সম্প্রতি দেখেছি এই অসন্তোষের কারণে শ্রমিকরা ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সর্বশেষ আমরা দেখলাম পল্লবীতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সাধারণ শ্রমিক ও জনতা রাস্তায় বিক্ষোভ প্রকাশ করলে সন্ত্রাসী মাওরা আডু বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে সমগ্র ঢাকায় এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সংগঠনটি ৫ দফা দাবিতে বলছে -
১. ব্যাটারিচালিত যানবাহন শ্রমিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি বন্ধ কর। কার্ড-টোকেনের নামে চলমান অবৈধ চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও তাদের প্রশ্রয়দাতা পুলিশ-ট্রাফিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে চাঁদাবাজি বন্ধ কর।
২. বিআরটিএ কর্তৃক ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত যানবাহন আটক বন্ধে নির্বাহী আদেশ জারি কর। ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন।
৩. বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার ভিত্তিতে রাস্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও ব্যাটারিচালিত যানের জন্য র্যাকার বিল কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা।
৪. পল্লবীতে সন্ত্রাসী মাওরা আড্ডু বাহিনী, বৃহত্তর লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর অঞ্চলে চাঁদাবাজ সোহরাবসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান।
৫. রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিকদের মানুষ হিসেরে নাগরিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন রিকশা- ভ্যান- ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাৎ খাঁ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিম মাইজভান্ডারি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম, উপদেষ্টা ও সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, উপদেষ্টা ও রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এনবি/এসএএইচ