পিরোজপুর: চাকরি দেওয়ার কথা বলে দুবাইয়ে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার এক ব্যক্তি ও তার দুবাইপ্রবাসী ছেলের বিরুদ্ধে। এছাড়া ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ও তাদের পরিবার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত দুবাইপ্রবাসীর নাম মো. সোহাগ ভূইয়া ও তার বাবার নাম আলমগীর ভূইয়া। নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুহিতলা গ্রামের বাসিন্দা তারা।
অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ছোট আমতলা গ্রামের ভুক্তভোগী মো. আরিফ মল্লিকের মা জায়েদা বেগম ও পঙ্গু বাবা ইলিয়াস মল্লিক তার ছেলের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি অভিযোগ করেন, গত প্রায় সাত মাস আগে সাড়ে ৩ লাখ টাকা সুদে এনে সোহাগ ভূইয়ার মাধ্যমে ছেলেকে দুবাই পাঠাই। সেখানে ছেলেকে কোনো চাকরি না দিয়ে তাকে ইয়াবা বিক্রি করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সে রাজি না হওয়ায় তাকে খাবার না দিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।
রুহিতলা বুনিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী মেহেদী হাসানের মা আজমীন বেগম জানান, তার ছেলে গত দু’বছর আগে আলমগীর ভূইয়ার ছেলে সোহাগ ভূইয়ার মাধ্যমে দুবাই যায়। সেখানে তার চাকরির বেতন মামাতো ভাই সোহাগ ভূইয়া আটকে রাখেন। তাকে সামান্য খাবার দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ছেলে প্রায়ই ফোনে কান্না করে নির্যাতনের খবর জানায়।
একই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলী কাজীর ছেলে দুবাইফেরত ভুক্তভোগী মো. জুয়েল কাজী বলেন, সাড়ে ৩ লাখ টাকায় দুবাই গিয়ে সেখানে ৫ মাস চাকরি করলেও আমাকে বেতনের টাকা দেওয়া হয়নি। বেতন চাইলে আমাকে এক মাস সামান্য খাবার দিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে গোপনে দেশে ফিরে আসি।
এ সময় ভুক্তভোগীর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রী অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
একই এলাকার মৃত আব্দুল মালেক কাজীর ছেলে দুবাইফেরত ভুক্তভোগী কাজী আল মামুন বলেন, গত বছরের ৩ জুলাই ব্যবসার চুক্তিতে সোহাগ ভূইয়ার মাধ্যমে দুবাই যাই। সেখানে যাওয়ার খরচ ও ব্যবসার জন্য দুই ধাপে তাকে ২১ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু ব্যবসার কোনো অংশীদার না করে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সেখানে রেখে আমাকে নির্যাতন করা হয়। পরে পালিয়ে দেশে ফেরি আসি। দেশে ফিরে এলে অভিযুক্ত সোহাগ ভূইয়ার বাবা ৪ লাখ টাকা ফেরত দেন।
ঝালকাঠী জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার পশ্চিম চেঁচরি গ্রামের তৈয়ব আলী হাওলাদারের ছেলে ভুক্তভোগী আল আমীন হাওলাদার বলেন, দুবাইতে কোম্পানিতে শ্রমিক নিয়োগের ভিসার কাজ সোহাগ ভূইয়াকে দিই। কিন্তু তিনি কোনো কাজ না করে আমার প্রয়োজনীয় আইডি ও ই-স্বাক্ষর কার্ড আটকে দুবাই মুদ্রার ২৭ হাজার দেরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ লাখ টাকা) হাতিয়ে নেন। আর এতে আমার ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ওই টাকা ও ডকুমেন্ট চাইতে গেলে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে সোহাগ।
একই অভিযোগ একই এলাকার মৃত শামসুল হক কাজীর ছেলে মো. এমদাদুল হক কাজীর।
ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, টাকা বা প্রবাসী ছেলের তথ্য জানতে চাইলে ভূইয়া বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্তের বাবা আলমগীর। এমনকি পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আইয়ুব হাসান কাজী বলেন, দুবাইপ্রবাসী সোহাগ ভূইয়া ও তার বাবা আলমগীর ভূইয়ার বিরুদ্ধে এমন প্রতারণার কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দিতে স্থানীয়ভাবে কয়েকবার সালিশও হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাসেল শিকদার বলেন, দুবাইপ্রবাসী সোহাগ ভূইয়া ও তার বাবা আলমগীর ভূইয়ার বিরুদ্ধে এমন প্রতারিত কয়েকজন মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্তের বাবা আলমগীর ভূইয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসএএইচ