ঢাকা, বুধবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ

মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিল ও চিকিৎসকের শাস্তি দাবি

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিল ও চিকিৎসকের শাস্তি দাবি

শাবিপ্রবি (সিলেট): সিলেটের বেসরকারি মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাহেদ আহমদের মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য ওই হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিল এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল বের করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির নেতারা। মিছিলটি মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের সামনে গিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘জাগো রে জাগো, শাবিপ্রবি জাগো’, ‘বন্ধ কর, বন্ধ কর, কসাইখানা বন্ধ কর’, ‘মাউন্ট অ্যাডোরা কসাইখানা, বন্ধ হোক আজাবখানা’ ইত্যাদি স্লোগানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

মিছিল পরবর্তী শাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অশোক বর্মণ অসীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী, সদস্য তাজিম উদ্দিন প্রমুখ।

সাহেদ আহমদের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে আহমদ মাহবুব ফেরদৌসী বলেন, সাহেদের মৃত্যুর জন্য আমরা ডা. খালেদ মাহমুদ ও ডা. শাহ কামালকে এককভাবে দোষারোপ করতে চাই। এতে জড়িত মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের এমডি ডা. আখতারুজ্জামানের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, ডা. খালেদ মাহমুদ ও ডা. শাহ কামাল যখন সাহেদের অপারেশন করেছিলেন, আমরা বলবো ছুরি চালিয়েছিলেন, তখন ডা. শোভন নামের একজন চিকিৎসক সাহেদের অ্যানেসথেসিয়া করেছিলেন। এই অ্যানেসথেসিয়ার কারণেই সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে যায়।

তিনি বলেন, সাহেদের সাইনাসের অপারেশন করে যখন ওটি থেকে বের করা হয় তখন দেখা যায় তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সামান্য সাইনাসের অপারেশন করতে গিয়ে সাহেদের চোখ কেন নষ্ট হবে? একই সময়ে একই ওটিতে তার আরেকটি অপারেশন কেন হবে? আমরা মনে করি, ডা. শাহ কামাল, ডা. খালেদ মাহমুদ ও এমডি ডা. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে।  

এই হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে ডা. শাহ কামাল, ডা. খালেদ মাহমুদ, ডা. শোভন ও ডা. আখতারুজ্জামানেরও নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানান।

মাউন্ট অ্যাডোরা কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ তুলে কলেজ পরিদর্শক তাজিম উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে সাহেদ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এর আগে গত বছর আমাদের আরেক সহকর্মী নুরজাহান ফাতেমা এই হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার জন্য মৃত্যুবরণ করেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ভুলভাবে প্রচার করে সিলেটের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বাইরে পাচার করছে। এটা অচিরেই বন্ধ হওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল সাহেদের চিকিৎসা খরচ বহন করবে। সাইনাসের অপারেশন করতে গিয়ে সাহেদের চোখ নষ্ট হয়েছে এটা তারা স্বীকারও করেছে। কিন্তু তারা সাহেদের চিকিৎসার খরচ বহন না করে কালক্ষেপণ করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত হয়ে যায়।

মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো মাহবুবুল হাকিম কর্মকর্তাদের এ দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, সাহেদের মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাহত। ভুল চিকিৎসায় সাহেদের মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছি। অতিদ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সিলেটের আখালিয়ার মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান সাহেদ আহমদ। সেখানে নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ কামাল কর্তৃক সাহেদের নাকে এন্ডোসকপিক সাইনাস অপারেশন করানো হয়। এর আগে একই দিন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহমুদ করেন সাহেদের সিস্টের অপারেশন। অপারেশনের পর দিন পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে তার আলট্রাসনো ও স্লিপেস টেস্ট করানো হয়। পরে হাসপাতালের এমডি অধ্যাপক ডা. আক্তারুজ্জামান জানান, সাহেদের প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে গেছে।

তবে একই সময় সাইনাস ও সিস্টের অপারেশনের ফলে সাহেদের একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়, প্যানক্রিয়াটাইটিস লিক হয়ে যায় এবং অগ্নাশয়ের জটিল সমস্যায় পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সাহেদের চিকিৎসা মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালের আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে গত ৬ ডিসেম্বর তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল (পিজি) হাসপাতালে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।

এ বিষয়ে মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ৩০ নভেম্বর সাহেদ নাকের অপারেশন ও অন্ডকোষে একটি ছোট সিস্ট অপারেশন করার জন্য ভর্তি হন। ১ ডিসেম্বর তার সার্জারি হয়। পরবর্তীতে তিনি অগ্নাশয়ে প্রদাহ রোগে আক্রান্ত হোন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর হোন। এ বিষয়ে হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অডিট কমিটি তদন্ত করেন। তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাহেদের শারীরিক জটিলতার সঙ্গে সার্জারির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সাহেদের শারীরিক জটিলতার সঙ্গে সার্জারির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও শাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনকে অবহিত করা হয়। মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতাল কোনোভাবে সাহেদের মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।