ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বালু উত্তোলনের অভিযোগে মৃত ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করে মামলা! 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪
বালু উত্তোলনের অভিযোগে মৃত ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করে মামলা! 

পাবনা: পাবনার সুজানগরে বালু উত্তোলনের‌ অভিযোগে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন সুজানগর পৌর ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বাবুল আক্তার।  

এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে ৮ বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে।

এছাড়াও ৮৫ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- কোনো প্রকার যাছাই-বাছাই না করেই নিজের ইচ্ছেমতো মামলা দায়ের করেছেন নায়েব বাবুল আক্তার। এতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ভুক্তভোগীরা। তবে বিষয়টিকে সামান্য ভুল দাবি করে গাফিলতি বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুজানগর পৌর এলাকার চর ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে ওই এলাকার কাদের মণ্ডলকে, যিনি ৮ বছর আগে মারা গেছেন। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে কাদের মণ্ডলের বড় ভাই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ৮৫ বছরের বৃদ্ধ শুকুর মণ্ডলকে। এছাড়াও এই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের অনেকেই বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয় বলে জানা গেছে।

মৃত কাদের মণ্ডলের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, ‘৭ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। তিন সন্তান নিয়ে অসহায়ভাবে বসবাস করছি। এর মধ্যেই হঠাৎ করে গত পরশুদিন শুনলাম আমার স্বামীকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে প্রধান আসামি করা হয়েছে। একজন মৃত মানুষ কীভাবে এখন বালু উত্তোলন করতে পারে? এজন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি চাই। ’

কাদের মণ্ডলের বড় ভাই মামলার দ্বিতীয় আসামি বয়োবৃদ্ধ শকুর মণ্ডল বলেন, ‘আমি ভালোভাবে চলাফেরাই করতে পারি না। আমার বয়স ৮৫ বছর। কীভাবে কোথায় কারা বালু উত্তোলন করে কিছুই জানি না। অথচ আমার মৃত ছোট ভাই ও আমাকে আসামি করা হয়েছে। ’

মামলার প্রধান সাক্ষী ইকবাল সরদার বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়ে কিছুই জানি না। পরে শুনলাম আমাকে নাকি সাক্ষী করা হয়েছে। আর আসামি করা হয়েছে মৃত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের। আমরা এলাকাবাসী মামলার আসামিদের নাম শুনে হতবাক হয়েছি। যাদের নাম শুনছি তারা অনেকেই নিরীহ সাধারণ মানুষ। ’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) বাবুল আক্তার বলেন, ‘বালু উত্তোলন কারা করছে তা আমি সরাসরি দেখিনি। ওই এলাকার মানুষদের কাছ থেকে শুনে মামলা করেছি। পরে মামলা সংশোধন করতে থানায় আবেদন করেছি। ’

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘নায়েব সাহেব যেভাবে এজাহার দিয়েছেন সেভাবেই আমরা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছি। এখন কেউ যদি মৃত বা অসুস্থ থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে বাদ দেওয়া হবে। ’

বিষয়টিকে গাফিলতি বলতে নারাজা সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার। তিনি বলেন, ‘এতে গাফিলতি কিছু নেই। যাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নায়েব সাহেব মামলাটি করেছিল তারা ভুল তথ্য দিয়েছিল। পরে জানা গেছে উনি মৃত। এতে গাফিলতি কিছু নেই। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই থানায় লিখিতভাবে দেওয়া আছে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না। পরবর্তীকালে চার্জশিট থেকে নাম বাদ যাবে। আর সাক্ষী কিছু জানে কী না জানে সেটা তো আদালতের বিষয়। এটা নিয়ে কিছু বলার নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।