বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলায় চাঞ্চল্যকর মা ও ৫ বছর বয়সী শিশু মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরকীয়া সন্দেহ ও পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে নিজেই স্ত্রীকে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে হত্যা করিয়েছেন - জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই বাগেরহাটের কাছে এমন তথ্য দিয়েছেন ওই নিহতের স্বামী আবু জাফর হাওলাদার।
পিবিআই বাগেরহাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গেল ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মা-মেয়ে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হত্যার স্বীকার পাপিয়ার স্বামী মো. আবু জাফর হাওলাদার (৩৯), ভাশুর আবু তালেব হাওলাদার (৫৫) ও তার স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫) এবং আরেক ভাশুর মো. আবু বক্কার হাওলাদার (৫০)।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি আসামিদের হেফাজতে নেয় পিবিআই।
জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার স্বীকার আবু জাফর হাওলাদার জানান, পরকীয়া সন্দেহের জেরে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছেন তিনি।
তার স্বীকারোক্তিমতে, লোক দিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা থাকলেও মেয়েকে হত্যার কথা ছিল না। সব সময় মোবাইলফোনে কার সঙ্গে কথা বলেন, বিষয়টি জানতে চাইলে তার স্ত্রী পাপিয়া তাকে জুতাপেটা করেন এবং বাড়ি থেকে বের করে দেন। স্ত্রী পাপিয়া এর আগেও স্বামীকে ঝাড়ুপেটা করেছিলেন।
এসব বিষয় নিয়ে স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন আবু জাফর হাওলাদার। পরিবারিক এসব জটিলতার কথা হত্যা মিশনে অংশ নেওয়া মনির হাওলাদারকে জানাত আবু জাফরের স্ত্রী পাপিয়া বেগম। এই সুযোগে আবু জাফরের কাছে মনির জানতে চায়, ‘কী জাফর ভাই, তোমাকে নাকি তোমার বউ জুতা দিয়ে মেরেছে?’।
তখন মনির প্রস্তাব দেয় তাকে ১ লাখ টাকা দিলে সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। তখন আবু জাফর বলে ‘চিন্তা করে দেখি’। পরে আবু জাফর তার ভাই আবু তালেবের মাধ্যমে মনিরকে ৩০ হাজার টাকা দেয়।
মনির টাকা পেয়ে আবু জাফরকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন, কাজ হলে বাড়ির লোকজন তাকে জানাবে বলে জানায়।
কথা অনুযায়ী গত বছরের ১১ আগস্ট আবু জাফরের স্ত্রী পাপিয়া ও মেয়ে সওদা জেনিকে কুপিয়ে হত্যা করে মনির হাওলাদার।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাগেরহাটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আছাদুল ইসলামের আদালতে একই ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আবু জাফর হাওলাদার।
পিবিআই, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আবু জাফর ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে নিজ স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা আসামিদের আদালতে সোপর্দ করেছি। পরবর্তী ব্যবস্থা আইন অনুযায়ী হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে পাপিয়া আক্তার (৩৮) ও তার মেয়ে ছাওদা জেনিকে (০৫) কুপিয়ে হত্যা করে মনির হাওলাদার ও তার লোকজন।
পরদিন হত্যার শিকার পাপিয়ার ভাই আলআমিন খলিফা বাদী হয়ে হত্যার শিকার পাপিয়ার স্বামী আবু জাফরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৪ জনকে আসামিকে করে শরণখোলা থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই দিনই হত্যা মামলায় মনির হাওলাদারসহ তার তিন ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে পিবিআই বাগেরহাট মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪
এসএএইচ