গাইবান্ধা: জমি বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে স্বজনদের বাধায় মৃত্যুর পর দুদিনের মাথায় মোতাহার আলী মুন্সি (৭০) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে জমি বিক্রির ৬০ লাখ টাকার চেক হাতে পেয়ে মৃত্যুর একদিন পর তার মরদেহ দাফন করেন ভাইবোন ও ভাতিজারা।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের সাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অবশেষে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে গণপূর্তের সাবেক হেড ক্লার্ক মোতাহার আলীর মরদেহ ফেলে রেখে দফায় দফায় বৈঠক চলে।
মোতাহার আলী মুন্সি ওই গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মৃতের স্বজন ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোতাহার আলী মুন্সি ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগম নিঃসন্তান। মারজিয়া (১৫) নামে একটি পালিত মেয়ে রয়েছে তাদের।
মোতাহার আলী গণপূ্র্ততে চাকরির সুবাদে ঢাকার কলাবাগান এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে দীর্ঘদিন আগে তিনি ৫৯ শতাংশ জমি কেনেন। কিছুদিন আগে সেই জমি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
এদিকে মোতাহার আলী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ওই দিনই মৃতের স্ত্রী মাসুমা বেগম, পালিত মেয়ে মার্জিয়া ও স্ত্রীর বড়ভাই নূরুল ইসলাম কাজী মরদেহ নিয়ে সন্ধ্যার দিকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। এরপর মৃতের আপন- চাচাতো ভাইবোন, ভাতিজাদের সঙ্গে শুরু হয় জমি বিক্রির টাকার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব-দরবার। দ্বন্দ্ব না মেটায় বাধা দেওয়া হয় মরদেহ দাফনে।
একপর্যায়ে একদিন পর স্ত্রী মাসুমা বেগম ৬০ লাখ টাকার চেকসহ মুচলেকা লিখে দেওয়ার পর মরদেহ দাফন করতে দেওয়া হয়।
মৃতের আপন ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সি জানান, তারা (মৃতের স্ত্রী) মরদেহ নিয়ে এলেও সঙ্গে চেক নিয়ে আসেনি। পরে ঢাকা থেকে চেক নিয়ে আসতে দেরি হওয়ায় মরদেহ দাফনে দেরি হয়েছে।
মৃতের চাচাতো ভাই সেকেন্দার আলী মুন্সি ও
ভাতিজা মানিক দাবি করেন, মোতাহার আলী মুন্সির এলাকায় কিছু ঋণ ছিল। এছাড়া তিনি জীবিত থাকতে এলাকায় মসজিদ-মাদরাসা করার জন্য টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে মরদেহ দাফনে কিছুটা দেরি হয়েছে।
এদিকে মৃতের স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, তার স্বামী মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণের জন্য ১৫/২০ লাখ টাকা দানের অসিয়ত করে গেছেন।
ঘটনাস্থল থেকে বেতকাপা ইউপি চেয়ারম্যান ও পলাশবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজ আলম রাত ১০টার দিকে মরদেহ দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মরদেহ দাফনের ঘণ্টা খানেক পরই মৃতের স্ত্রী তার পালিত মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
এসআই