বাগেরহাট: বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থী বেড়েছে কয়েকগুণ। মুসলিম স্থাপত্যের বিস্ময়কর এই নিদর্শনসহ প্রাচীন নানা স্থাপনা দেখতে ছুটে আসছেন দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা।
শনিবার (০২ মার্চ) সকাল থেকেই ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা। শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধসহ নানা বয়সী দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মসজিদ প্রাঙ্গণ। কেউ সেলফি তুলছেন মসজিদের সঙ্গে, কেউ আবার প্রিয়জনকে নিয়ে মসজিদের সামনের গাছের ছায়ায় বসে নীরবে সময় কাটাচ্ছেন।
মসজিদের গেটের বিপরীত পাশে ফোটা নানা নাম ও বর্ণের ফুল বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে দর্শনার্থীদের। কমপ্লেক্সের মধ্যে থাকা বিভিন্ন রাইডে চরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে শিশুরা। মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ও বাগেরহাট যাদুঘরে থাকা প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন উপকরণ দেখে খুশি দর্শনার্থীরা।
টাঙ্গাইলের আয়নাপুর থেকে আসা দর্শনার্থী ককিলা আক্তার বলেন, এখানে এসে অনেক ভাল লেগেছে। যেমন শুনেছি, তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় ষাটগম্বুজ মসজিদ।
ঝালকাঠি থেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে মসজিদ দেখতে আসা মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, ছাত্রজীবনে ষাটগম্বুজ মসজিদে অনেকবার এসেছি। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর আর আসার সুযোগ হয়নি। দুই মেয়ে ও স্ত্রীর আবদার রাখতে এসে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। পরিবারের খুবই ভাল লেগেছে এখানে এসে।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঘুরতে আসা নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুণ-অর-রশীদ বলেন, মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদ। মুসলিম সভ্যতা যে কত সমৃদ্ধ ছিল, তা এখানে আসলে বোঝা যায়। তখনকার যে নির্মাণ শৈলী তা নিঃসন্দেহে অনেক উঁচুমানের। সব মিলিয়ে এখানে এসে শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি।
নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলে, বইতে ষাটগম্বুজ মসজিদের কথা অনেকবার পড়েছি। কিন্তু দেখার সৌভাগ্য হয়নি, এবার এসে স্বচক্ষে দেখে খুবই ভাল লেগেছে। ছোড়া খানজাহান (রহ) এর মাজারেও গিয়েছি, খুবই ভালো লেগেছে।
শুধু ষাটগম্বুজ মসজিদ নয়, বাগেরহাটের খানজাহান আলী (রহ.) মাজার, অযোদ্ধার মঠসহ জেলার বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশও কাজ করছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আতাউর রহমান বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে আমাদের মোবাইল ফোন নাম্বার দেওয়া আছে। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক তাদের সহযোগিতা করা হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পর্যটন মৌসুমে ষাটগম্বুজ মসজিদে সাধারণত প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ৪ হাজার দর্শনার্থী আসেন। তবে ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার এ সংখ্যা ৬ হাজার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ মসজিদ ভ্রমণ করেছেন। যা দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আয় হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এসব দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ২০ জন আনসার সদস্য রয়েছে। এর পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, শীত কমে যাওয়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ষাটগম্বুজ মসজিদসহ জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনায় দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে। শুক্র ও শনিবার সাধারণ দিনের থেকে দর্শনার্থী অনেক বেড়ে যায়। জনবল কম থাকায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এরপরেও দর্শনার্থীদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৪
আরএ