ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রাস্টের নামে মনিপুর স্কুলের ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৪
ট্রাস্টের নামে মনিপুর স্কুলের ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ঢাকা: সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অস্তিত্ব ধ্বংসের অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবি করেছিলেন ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। এবার তার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মনিপুর স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের একটি গ্রুপ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মনিপুর স্কুলের আইটি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও অভিভাবক পরিষদের সভাপতি একলিমুর রেজা কোরাইশী।

তাদের অভিযোগ, কামাল আহমেদ মজুমদার নিজেই এ মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে বিভিন্ন সময় অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। সাবেক গভর্নিং বডির কমিটির সদস্য ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ও তার পিএ মিলে ট্রাস্টের নামে স্কুল থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে সেনাবাহিনী বা শিক্ষা ক্যাডার থেকে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্কুলের অভিভাবক পরিষদের সভাপতি একলিমুর রেজা কোরাইশী বলেন, দানবীর নূর মোহাম্মদ ১৯৬৯ সালে মনিপুর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি কুচক্রী মহলের শকুনি দৃষ্টির কারণে কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে চক্রান্ত চলছে। এটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে অপতৎপরতার ছক কষা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এমপিওভুক্তি বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি ট্রাস্টের অধীনে নেওয়ার অপতৎপরতা চলছে। ফলে প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার কিছু মন্তব্য করেছেন। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে না থাকতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের আগস্টে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। এ প্রজ্ঞাপনের পর এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির চেয়ারে তার মেয়ে রাশেদা আক্তারকে বসান। তিনি অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্রতিষ্ঠানটিকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন।

৮ বছর এমপিওর টাকা পান না শিক্ষকরা। মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনায় অবৈধভাবে ট্রাস্টি গঠনের তোড়জোড় চালাচ্ছে একটি মহল। এজন্য ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে শিক্ষকদের এমপিওর টাকা তুলতে দেওয়া হয় না। অথচ প্রতিমাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনের সরকারি অংশের টাকা আসে। তারা মনে করেন, এমপিও বন্ধ করা হলে এ প্রতিষ্ঠানকে তাদের নামে ট্রাস্ট করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলন বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের মেয়ে রাশেদা আক্তারকে রেখে ৯ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্য মাউশি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে সরব হন। উচ্চ আদালতে রিট হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের আইনগত কোনো সুযোগ নেই বলে অফিস আদেশে জানায় মাউশি।

মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাড়তি ফি ও বিভিন্ন চার্জ নেওয়ায় তা অভিভাবকদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। অভিভাবকরা বলেন, প্রতি বছর ৮ হাজার টাকা দিয়ে পুনঃভর্তি করাতে হয়। বর্তমানে ১৫০ টাকা হারে আইসিটি চার্জ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো সুফল নেই। অন্যদিকে স্কুলের বার্ষিক আয় শত কোটি টাকার বেশি। শিক্ষক নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যে আয় হয় আরও কয়েক কোটি টাকা। এসব অর্থের যথাযথ হিসাব নেই। অধ্যক্ষ ও অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, কমিটির সদস্য ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন ৪০০ কোটি টাকা, সাবেক অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন ৩০০ কোটি টাকা ও অধ্যক্ষের পিএ হুমায়ুন ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সুসংবাদ হচ্ছে, অভিভাবকদের মধ্য থেকে মামলা দায়েরের কারণে অবৈধ ট্রাস্টের সদস্য সদস্যরা বিদ্যালয় থেকে টাকা ভাগাতে পারেনি। ফলে এ বছর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা ফান্ডে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেনের বয়স আগামী ৯ মার্চ ৬০ বছর পূর্ণ হবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ নিয়োগ আবশ্যক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো অ্যাডহক ম্যানেজিং কমিটি বা পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি না থাকায় এত বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কঠিন।

অভিভাবকরা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক শৃঙ্খলা, ফলাফল, শিক্ষক কর্মচারী ও অভিভাবকের ওপর প্রভাবশালী মহলের যে অযাচিত হস্তক্ষেপ ও হয়রানি ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে প্রভাবমুক্ত রাখতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজের) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ১১ দশমিক ১৩ এর বিধি বলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে একজন দক্ষ আর্মি অফিসার (অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল বা নিয়মিত) অথবা প্রশাসনিকভাবে দক্ষ শিক্ষা ক্যাডারকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এসব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হওয়া দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মতান্ত্রিক স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসা দরকার। তাই এই স্কুল‌ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক পরিষদের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী, অভিভাবক কবিতা আক্তার, মোজাম্মেল হোসেন ভুঁইয়া, স্কুলের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৪
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।