ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৌলভীবাজারে মডেল মসজিদ নির্মাণে ধীরগতি

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৪
মৌলভীবাজারে মডেল মসজিদ নির্মাণে ধীরগতি

মৌলভীবাজার: জেলাজুড়ে মোট আটটি মডেল মসিজদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু নানা জটিলতায় মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজে দেরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বৃষ্টিসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে।

সৌদি সরকারের অর্থায়নে ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মৌলভীবাজারের মসজিদগুলোর নির্মাণের সময় নির্ধারণ করা হয়। মোট আটটি মজসিজদ নির্মাণের কথা থাকলেও মাত্র পাঁচটির কাজে ৪০ শতাংশ অগ্রগতি দৃশ্যমান। গণপূর্ত অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানা গেছে, জেলা আইকনিক মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস পর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আরম্ভ হয় নভেম্বরে। মসজিদ নির্মাণ কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ১২ শতাংশ। এরমধ্যে রাজনগর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ অগ্রগতি ৬০ শতাংশ, বড়লেখা উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ অগ্রগতি ২৭ শতাংশ, কুলাউড়ায় মাত্র ১ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ মেয়াদ বাকি আর তিন মাস। অথচ, আটটি মসজিদের মধ্যে একটিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করতে পারেনি।

মৌলভীবাজারের শহরতলীর ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের জগন্নাথপুর এলাকায় ২০২৩ সালের জুনে চারতলা বিশিষ্ট আইকনিক জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি শুরু হয় গত নভেম্বরে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্স দাবি করছে, হাওর এলাকা ও বর্ষার কারণে জমে থাকা পানির কারণে এ এলাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে দেরি হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার দাবি করেন, দেরিতে শুরু হয়েও শ্রমিকরা শ্রমিকরা পুরো দমে কাজ করছে। আশা করা যায়, আগামী ৭-৮ মাসের মধ্যে এ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। জগন্নাথপুরে মডেল মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় ১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রায় ৪৭ শতাংশ জমির ওপর ১১০ ফুট প্রশস্ত ও ১৭০ ফুট দৈর্ঘ্যর মসজিদটি ১৯ হাজার ৩০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের। মূল ভবনের এরিয়া আনুমানিক ১৪ হাজার ফিট। আর মসজিদটির মিনার হবে ৯০ ফুট উচ্চতার।

সরেজমিনে নির্মাণাধীন প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। ৭৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বিশাল উচ্চতার টাওয়ার রিগ মেশিনের মাধ্যমে ৬০ ফুট উচ্চতার একেকটি পিলার মাটির অভ্যন্তরে স্থাপনের কাজ চলছে। মাটির ৬৫ ফুট গভীরে এমন ২২৭টি পিলার স্থাপন করা হবে।

নির্মাণ কাজের দায়িত্বরত প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দীন জানান, রমজানের আগেই তারা পিলার স্থাপন ও পাইলিংয়ের কাজ শেষ করতে চান। একইসঙ্গে বেজ ঢালাই ও বাউন্ডারির কাজ শুরু করা হবে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের ১২ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

রাজনগর উপজেলায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের মনসুরনগর ইউনিয়নের কাটাজুড়ি এলাকায় ৪৩ শতাংশ ভূমির ওপর ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। বিলম্বে শুরু হলেও এ মসজিদ নির্মাণ কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার মডেল মসজিদ প্রকল্পের কাজ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া দেশের ২০০ মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের সময় এ মসজিদটিও মসজিদটিও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে মসজিদটির শেষ ধাপের কাজ চলছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

বড়লেখা উপজেলায়ও একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ কাজ করছে বঙ্গ বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছে, এ মসজিদের কাজ ২৭ শতাংশ শেষ হওয়ার পর কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যায়। একই নকশায় ডিজাইন করা তিনতলা বিশিষ্ট দুটি মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া এলাকায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণের জন্য দরপত্র অনুমোদনের জন্য ঢাকার গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি সূত্র।

সূত্র আরও জানায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চার দফায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ শহরের হবিগঞ্জ সড়কের পেট্রোল পাম্পের কাছে ৫০ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুই মাস আগে চিঠি পাঠানো হয়। ওই ভূমির কিছু অংশ সরকারি, বাকি ব্যক্তি মালিকানাধীন।

জুড়ী উপজেলার জন্য উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ ভবানিপুর এলাকায় সাড়ে ৪৮ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই স্থানে ৭ ধারার নোটিশ চলমান। যে কারণে এখনও ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জুড়ী উপজেলার মডেল মসজিদ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, দ্রুতই ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সমাধান করা হবে।

মৌলভীবাজার গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী রাহুল রায় এসব ব্যাপারে বলেন, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় জেলার অধিকাংশ মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এটা ৬ মাসও হতে পারে আবার এক বছরও হতে পারে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালের জুনের আগেই পুরো জেলার আটটি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৪
বিবিবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।