জুয়েলারি শিল্পে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, এজন্য দরকার সরকারের নীতি সহায়তাসহ সরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাজুস কার্যালয়ে ‘জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের ভূমিকা’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।
নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করার আহ্বান অনুষ্ঠান শেষে নারী উদ্যোক্তাদের সাথে নিয়ে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন উইমেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান ফরিদা হোসেন কেক কাটেন পৃথিবীর সকল ভালো কাজের পেছনেই নারীদের অবদান রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যান্য কর্মকাণ্ডে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। তাই তাদেরকে ঘরে বসিয়ে না রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন জুয়েলারি শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত নারী উদ্যোক্তারা।
আজ শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের বাজুস কার্যালয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাজুসের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও মুখপাত্র দিলীপ কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন উইমেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান ফরিদা হোসেন।
বক্তারা বলেন, নারীদের প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে হবে সব নারীকে।
বাজুসের নারী উদ্যোক্তারা বলেন, এই খাতে সমতা নেই। পর্যায়ক্রমে এই সমতা বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, নারীর জন্য মা হওয়া কিংবা সন্তান লালন-পালন করাটা প্রকৃতির আশীর্বাদ হলেও কর্মজীবী নারীর জন্য তা যেন অভিশাপ। সরকারি কর্মীরা ছয় মাসের ছুটি পেলেও বেসরকারি খাতে চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধানও মানা হয় না। উল্টো বাধ্য করা হয় চাকরি ছাড়তে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদস্থ নারী কর্মকর্তারাও গর্ভধারণের সময়ে যেন প্রতিষ্ঠানের বোঝা হয়ে ওঠেন। যোগ্যতায় পুরুষের সমান হয়েও কর্মস্থলে পিছিয়ে পড়েন নারীরা।
বাজুসের মুখপাত্র ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নারীকে কাজে উৎসাহ দিতে হবে এবং কর্মপরিবেশ গড়ে দিতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে নারী, এগিয়ে যাবে দেশ।
‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজুস প্রতিবারের মতো এবারও পালন করেছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
অনুষ্ঠানে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন উইমেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান ফরিদা হোসেন বলেন, একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে মনে করি জুয়েলারি শিল্পে নারীদের সফলতার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কারণ সোনার গহনা নারী সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এক্ষেত্রে নারীরা সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেলে তাদের সৃষ্টিশীল মেধা মনন প্রকাশের সুযোগ পাবে। যা এ শিল্পের উন্নতির পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, নারীর সমঅধিকার নিশ্চিতকল্পে প্রতি বছর ৮ মার্চ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। দেশে জুয়েলারি শিল্পেও নারীর অবদান ক্রমশ বাড়ছে। এক্ষেত্রে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরকে। যিনি জুয়েলারি শিল্পে নারীর সুপ্ত ক্ষমতাকে সৃষ্টি ক্ষমতায় রূপদান করার জন্য যুগান্তকারী ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন।
ফরিদা হোসেন বলেন, বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আমি মনে করি নারীদের জন্য এই শিল্পে সফল হওয়ার যথেষ্ট অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। ঝুঁকি তুলনামূলক কম, তাই সফল হওয়ার সম্ভাবনাটাও অনেক বেশি। আমি বিশ্বাস করি খুব দ্রুতই জুয়েলারি শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা এদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তিনি নারীদের উদ্দেশে বলেন, আজকের এই ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ যেন শুধু উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে সবাই যেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হতে পারেন, সেই প্রত্যাশা রাখছি।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন উইমেন অ্যাফেয়ার্সের সদস্য সোনালী শবনম বলেন, নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ভ্যাট-টাক্স নিয়ে হ্যারাজমেন্ট। এ বাধা দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে নারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন উইমেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান ফরিদা হোসেনসহ অতিথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/