ঢাকা: রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বসবাস করতেন তৃতীয় লিঙ্গের ২৫-৩০ জন হিজরা। ঈদে খরচ করার জন্য মানুষের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তে প্রায় লক্ষাধিক টাকা জমিয়ে গুরু মার কাছে রেখেছিলেন তারা।
কিন্তু আগুনে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের সঙ্গে সেই টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সমাজে পিছিয়ে পড়ার এই জনগোষ্ঠীর।
রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে কড়াইল বস্তির একটি অংশে৷ আগুনে পুড়ে যায় কয়েকশ টিন-কাঠের ঘর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকেই খোলা আকাশের নিচে সময় কাটছে ক্ষতিগ্রস্তদের।
এদিন রাত সাড়ে ১০টায় কড়াইল বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পোড়া স্তূপের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আক্ষেপ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন হিজরা। কি করবেন, কোথায় যাবেন এ নিয়েই সবার চিন্তা।
এই বস্তিতে ১৪টি রুম ছিল তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠীর। সবগুলো ঘরই আগুনে পুড়ে গেছে। সেখানে পড়ে আছে পোড়া আসবাবপত্র। বাঁচানো যায়নি কিছুই। এমনকি ঈদের জন্য জমানো লক্ষাধিক টাকা ছিল টিনের বক্সে। সেই টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সূবর্ণ নামের এক হিজরা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে ১৪টি ঘর ছিল। সেসব ঘরে প্রায় ২৫-৩০ জন হিজরা থাকতো। কেউই কিছু বের করতে পারেনি। আগুনে সব পুড়ে গেছে। সামনে ঈদ, এজন্য মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে লক্ষাধিক টাকা জমিয়ে গুরু মার কাছে রেখেছিলাম। সেই টাকাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এই বস্তির হিজড়াদের গুরু মা ঝুমা বলেন, ঈদের আগে মানুষ যাকাত-ফিতরা দেয়। সেই যাকাত-ফিতরার জন্য আমরা সারাদিন দৌড়াচ্ছি। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে সাহায্য নিচ্ছি। ঈদের জন্য জমানো প্রায় এক-দেড় লাখ টাকা ছিল। এসে দেখি আগুনে সব পুড়ে শেষ। আমাদের হারানোর তো কিছু নেই। তাও ঈদের আমরা নিজেরা একটু আনন্দ-উল্লাস করতাম। সেই আনন্দও এবার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
হিজড়াদের মতোই আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন এই বস্তিতে বসবাস করা প্রায় আড়াইশ পরিবার। তাদের সবারই এখন রাত কাটছে খোলা আকাশের নিচে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ