মাদারীপুর: মাদারীপুরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে।
মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলার চারটি বধ্যভূমিকে চিহ্নিত করে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ করছে।
মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামে মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় খলিল বাহিনীকে ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে এ গ্রামের ১৩৫ জন নিহত হন। নিহতদের কলাগাছিয়া গ্রামের বর্তমান এবিসিকে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সামনের তখনকার ফাঁকা স্থানে গণকবর দেওয়া হয়।
এখানে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় প্রতিটি বধ্যভূমিতে ৭০ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচে মেসার্স ফারদিন বিল্ডার্স মাটি ভরাটের মাধ্যমে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু করে। বর্তমানে নির্মাণ কাজ শেষের পথে। চলতি মাসেই এ বধ্যভূমির লিখিত ইতিহাসসহ উদ্বোধন করা হবে। এখানে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে হলেও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করায় স্থানীয়রা এ গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। এতে মুগ্ধ এ অঞ্চলের মানুষেরা।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বলেন, কলাগাছিয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে গ্রামের প্রায় দেড়শ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা জানতাম না। এখানে এ বধ্যভূমি সরকার তৈরি না করলে জানতে পারতাম না এখানের এ ইতিহাস। আমাদের এ কলাগাছিয়ার বধ্যভূমিই নয়। পুরো মাদারীপুর জেলায় যতগুলো বধ্যভূমি রয়েছে। সবগুলোই সংরক্ষণের দাবি করছি।
কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মো. রায়হান কবীর বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়ার যেসব সাধারণ মানুষদের পাক বাহিনী হত্যা করে পুঁতে রেখেছিল। সেখানে নতুন প্রজন্মের জানার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে এলাকার মানুষের জন্য খুব ভালো একটি কাজ হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের এ অঞ্চলের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। এজন্য আমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের খলিল বাহিনীর থানা কমান্ডার খলিলুর রহমান খান বলেন, বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় পর্যায়ের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে জেলার সবগুলো বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করা একান্ত জরুরি। শুধু জরুরিই নয় এটা করতেই হবে। তা না হলে মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই হাজারো বছর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের এসব কর্মকাণ্ডগুলোকে সংরক্ষণ করা দরকার।
তিনি বলেন, সরকার যেন দ্রুত মাদারীপুরের সবগুলো বধ্যভূমির সংরক্ষণের যেসব জটিলতা রয়েছে তা নিরসন করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সেই দাবি জানাচ্ছি। এসব কাজগুলো শেষ হলে গ্রাম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরলে আগামীর বাংলাদেশ একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে।
মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের জেলার চারটি বধ্যভূমিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি বধ্যভূমির নির্মাণ কাজ শেষের পথে। খুব শিগগিরই জনসাধাণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি তিনটির জমি সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত নিরসন করে শিগগিরই বধ্যভূমির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেই কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, সবগুলো বধ্যভূমিই খুব শিগগিরই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে সংরক্ষণ করে ফেলতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
আরআইএস