জামালপুর: জেলা সদর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একটি পুরাতন ভবন ছুটির দিনে ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাঙচুরের অংশগুলোও।
কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় কারা এই ভবন ভাঙলো তা জানে না স্থাস্ব্য বিভাগসহ স্থানীয়রা। এ বিষয়ে থানায় জিডির পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খানের নির্দেশে ভাঙা হয় ভবনটি।
উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এই কেন্দ্রের সীমানায় ছিল শত বছর বয়সী এই পরিত্যক্ত ভবনটি। স্থানীয়রা এটিকে চেনেন ‘ডাক্তার খানা’ হিসেবে।
গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) বন্ধের দিন হাওয়া হয়ে গেছে ভবনটি। এখন পড়ে আছে শুধু মাত্র অবশিষ্ট অংশটুকু। তবে কে বা কারা এই ভবন ভেঙে নিয়ে গেছে তা জানে না স্বাস্থ্য কর্মীরাও। এ নিয়ে জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, শত বছর বয়সী ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪ ফুট প্রস্থের এই ভবন ব্যবহৃত হতো দাতব্য চিকিৎসালয় হিসেবে। আর ভবনটিতে ছিল তিনটি কক্ষ। এক সময় এই অঞ্চলের মানুষ এখান থেকে চিকিৎসা সেবা পেতেন।
রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান গেটের পরে হাতের বাম ও ডান পাশে পড়ে আছে কিছু ইটসহ ভবনের ভাঙা কিছু অংশ। এছাড়া কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রাঙ্গণে দেখা গেছে সেই ভবনের কিছু রড ও একটি ভেকু গাড়ি। কে বা কারা কি কারণে ভবনটি ভেঙেছে এমন প্রশ্নের উত্তর নেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীদের কাছে।
কেন্দুয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সারমিন সিরাজী বলেন, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) আমরা অফিস শেষ করে চলে যাই। এরপর শনিবার (৩০ মার্চ) আবারও অফিসে এলে দেখি যে পরিত্যক্ত ভবনটি কে বা কারা ভেঙে নিয়ে গেছে। পরে আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই ও জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আশেপাশের বাসিন্দারা বলছেন, শুক্রবার দুপুর থেকে ভবনটি ভাঙ্গা শুরু করে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের লোকজন। ভবন ভাঙতে অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো হামলার হুমকি পান স্থানীয়রা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান সোহেল।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, আমরা হাসপাতালের পাশে থাকি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের লোকজন এসে ভবন ভাঙা শুরু করে। রাত ১টা পর্যন্ত ভবন ভাঙার কাজ চলে। আমার ছেলে জিজ্ঞেস করতে গেলে তাকে আরও মারধর করতে আসছিল তারা।
আরেক বাসিন্দা মো. শাহিন বলেন, চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানের নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠ সহকারী সাজু বুলডোজার ও ভেকু দিয়ে ভবনটি ভাঙার কাজ করেন। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলেও তারা তা দেখাননি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ভবনটি এই এলাকার মাদক ব্যবসার একটি কারখানা ছিল। তাই সেটি সরানোর জন্য আমি স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসনসহ সদর এমপিকে কয়েকবার জানাই। কে এই ভবন ভেঙেছে তা আমরা জানি না। ঘটনার পর আমি ভবনের ভাঙা চূড়ার অবশিষ্ট অংশটুকুর নিরাপত্তার জন্য বাজারের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছি। আমার পরিষদের সামনে হলেও আমি জানি না কে ভেঙেছে।
জামালপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, রোববার দুপুরের দিকে আমি ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। আর এই বিষয়ে জামালপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর ভবনের যেটুকু অবশিষ্ট আছে, সেটুকুর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৪
এফআর