ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ সনদ বিক্রি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ গ্রেপ্তার ২

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
অবৈধ সনদ বিক্রি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ গ্রেপ্তার ২

ঢাকা: কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নিয়েছে হাজারো আসল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি।

পড়ালেখা ছাড়াই পাঁচ হাজার লোকের হাতে টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়েছেন আসল সার্টিফিকেট। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও দেখা যায় সেসব সার্টিফিকেটের তথ্য। অবশেষে মূল হোতা শামসুজ্জামান ও তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আসল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির সরঞ্জাম।  

সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ও আগারগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, একদিকে মেধাবী ছাত্ররা কঠিন লেখাপড়া করেও ভালো রেজাল্ট করতে পারছেন না। অন্যদিকে তিনি (শামসুজ্জামান) তার বাসায় বসে ইচ্ছা মতো টাকার বিনিময়ে ভালো রেজাল্ট দিয়ে সার্টিফিকেট বিক্রি করছেন। এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের আর কোনো কর্মকর্তা এ সিন্ডিকেটে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিএমপির ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) বলেন, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম সোমবার ভোর থেকে নজরদারিতে রেখে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এটিএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকালে কাছাকাছি দুটি বাসায় তাদের হেফাজতে থাকা একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরিকৃত শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়েছে। এসব কম্পিউটার ও প্রিন্টার এবং ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি আসল সার্টিফিকেট, মার্কশিট বানিয়ে বিভিন্ন লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন লোকদের কাছে বিক্রি করা সার্টিফিকেটগুলোকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এ ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার সার্স করলে সার্টিফিকেটগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।

তিনি বলেন, শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। তিনি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালে। বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট। দেশের ৬৪টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে-কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজারো ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নাম্বার, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সব প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে।

মশিউর রহমান বলেন, সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, কতজন ফরম ফিলআপ করে রোল নাম্বার পেয়েছেন, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নাই আবার কতজন কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হয়েছে তার সব তথ্যই তার কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্য ভাণ্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্তৃপক্ষ, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ ও প্রতিমাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছেন। শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এ বাণিজ্য করে আসছিলেন। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতেন যে, তারা অরজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে যা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালেও মার্কশিট-সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে শামসুজ্জামানকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বহাল হয়ে তিনি এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় তার নামে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৪
এমএমআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।