রাজশাহী: দলে সুইপার পরিচয়ে একজন ব্যক্তি থাকেন। এই চক্রটি তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিকে বলেন, তিনি সুইপার।
রাজশাহীতে এমন একটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। চক্রের মূলহোতাকে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর একজন আগে থেকেই আছেন কারাগারে। এদের আরও দুইজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের সদস্যরা সারা দেশেই ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা করে আসছে। গত বছরের অক্টোবরে একটি ব্যাংকের রাজশাহীর সাহেববাজারের করপোরেট শাখার সিনিয়র অফিসার ময়রুল ইসলামের সঙ্গে প্রতারণা করার এক মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই চক্রের সন্ধান পায়।
ডলার প্রতারক চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছরের মে মাসে রাজশাহীর বর্ণালী মোড়ে এক কলেজ শিক্ষকের সঙ্গেও প্রতারণা করে চক্রটি।
এই চক্রের মূলহোতার নাম হাফিজুর রহমান ওরফে রবি (৪৮)। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার বালিয়া গ্রামে।
হাফিজুরের ভাই হাবিবুর রহমান অন্য মামলায় আগে থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন। সোমবার (১ এপ্রিল) সকালে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে হাফিজুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ভাঙ্গা, নগরকান্দা, কোতয়ালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর ও দিনাজপুর সদর থানায় তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই নয়টি মামলা ছিল। রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার নতুন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা জানান, গ্রেপ্তার হাফিজুর রহমানের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বুধবার (৩ এপ্রিল)। জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে চক্রের অন্য সদস্যদের তথ্য নেওয়া হবে।
এছাড়া এরইমধ্যে ডলার প্রতারক চক্রের সদস্য গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের সাগর খন্দকার, সিরাজ মিয়া, রফিক ঢালি ও ফরিদপুরের নগরকান্দার কামরুল চৌধুরীর ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এসআই গোলাম মোস্তফা জানান, জামিল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন। তিনি লেনদেন করেন ওই ব্যাংকের রাজশাহীর সাহেববাজার করপোরেট শাখায়। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ময়রুল ইসলামকে জানিয়ে রেখেছিলেন, কেউ ডলার বিক্রি করতে এলে যেন তাকে জানানো হয়। ডলার কেনার জন্য তিনি ব্যাংকে সই করা চেকও দিয়ে রেখেছেন। ৬ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি ফোন করে ময়রুল ইসলামকে জানান, তিনি পাঁচ হাজার ডলার বিক্রি করতে চান।
ব্যাংক কর্মকর্তা ডলার কেনার ব্যাপারে জামিল উদ্দিনের সম্মতি নেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর দুই ব্যক্তি ব্যাংকে যান ডলার বিক্রি করতে। ময়রুল ইসলাম তখন জামিলের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা তুলে ডলারের বিক্রেতাদের দেন এবং ডলারের বান্ডেল নেন। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তা ক্যাশ কাউন্টার থেকে উঠে বান্ডিল খুলে দেখেন, বান্ডিলের ওপরে ও নিচে শুধু ১০০ ডলারের দুটি নোট আছে। মাঝের ৪৮টি নোট এক ডলারের। অর্থাৎ পাঁচ হাজার ডলারের জায়গায় তিনি মাত্র ২৪৮ ডলার পেয়েছেন। এই বিষয়টি পরে জানাজানি হলে জামিল উদ্দিন অজ্ঞাত প্রতারকদের আসামি করে মামলা করেন। কিন্তু প্রতারকরা মাস্ক পরে থাকায় সিসি ক্যামেরার ছবি দেখেও তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। প্রতারক চক্রটি যে মোবাইলফোন থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন করেছিলেন, সেটির কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এই প্রতারক চক্রের সন্ধান পায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, গত বছরের ২৮ মে এই প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হন রাজশাহীর বাগমারার নাসিরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মোয়াজ্জেম হোসেনও। সেদিন প্রতারক চক্রটি মহানগরের বর্ণালী মোড়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকার ডলার বিক্রি করতে চান। তবে চক্রের সদস্যরা টাকা নেওয়ার পর ডলার না দিয়েই কৌশলে পালিয়ে যান। তবে টাকা দেওয়ার আগে কলেজ শিক্ষক মোয়াজ্জেম চক্রের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে সেলফি তুলেছিলেন। সেই ছবির সঙ্গে এই চক্রের প্রতারকদের ছবি মিলে গেছে।
রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, এই প্রতারক চক্রটি সারা দেশেই ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা চালিয়ে আসছে। ঈদ মৌসুম এলেই তাদের এমন প্রতারণা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এরমধ্যেই মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
তাকে রিমান্ডে নিলে অভিনব এই ডলার প্রতারণার ব্যাপারে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে বলেও মন্তব্য করেন বোয়ালিয়া থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৪
এসএস/এএটি