ঢাকা: ২০০৯ সালের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুর্ধর্ষ ডাকাতি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. শামীম মোল্যা ওরফে শামীমকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার (৬ এপ্রিল) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজাহার হোসেন বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার শামীম দুর্ধর্ষ ডাকাতির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন মাজড়া মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছবুর হোসেন মোল্যা তার স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে রেখে তার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে যান। ছবুর মোল্যার অনুপস্থিতির সুযোগে ওইদিন রাত ২টা ৩০ মিনিটে তার ঘরের দরজা ভেঙে গ্রেপ্তার আসামি শামীম ডাকাতসহ অপরাপর সহযোগী আসামি সাজু মোল্যা, নুরু মোল্যা, জুয়েল মোল্যা, সোহাগ, বুদ্দু শেখ, কোবাদ, বাবুল, শাহী, জনি, মাফিজুর ও আলামিন ঘরে প্রবেশ করে। আসামিরা ছবুর মোল্যার স্ত্রী ও সন্তানকে টেনে হিঁচড়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে তাদের গলায় ধারালো রামদা ও ছুরি ধরে কোনোরকম শব্দ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং ছবুর মোল্যার স্ত্রীর কানে থাকা স্বর্ণের দুল ও ট্রাংকে রক্ষিত নগদ ৭২ হাজার টাকা, একটি স্বর্ণের আংটি, একটি স্বর্ণের চেইন, এক ভরি রুপার গহনা ইত্যাদি লুণ্ঠন করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার পর ছবুর মোল্যার স্ত্রীর ডাক-চিৎকার শুনে প্রতিবেশী লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। খবর পেয়ে ছবুর নিজেও বাড়ি ফিরে আসেন। ছবুর মোল্যার স্ত্রী ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে সাজু মোল্যা ও নুরু মোল্যাকে চিনতে পেরেছেন বলে উপস্থিত সবাই জানান। পরদিন সকালে ছবুর মোল্যা বাদী হয়ে কাশিয়ানী থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সাজু মোল্যা ও নুরু মোল্যাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির ঘটনায় নিজেরা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং এ ঘটনায় জড়িত শামীম ডাকাতসহ ১০ জনের নাম প্রকাশ করলে পুলিশ শামীম ডাকাতকে গ্রেপ্তার হয়। জেল হাজতে নয় মাস অতিবাহিত করে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপন করে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল।
মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালে বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালত, গোপালগঞ্জ কর্তৃক উক্ত মামলার ১২ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর গ্রেপ্তার এড়াতে শামীম মোল্যা ময়মনসিংহ থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় এসে আত্মগোপন করে। র্যাবের গোয়েন্দা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শনিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে উক্ত মামলার ১২ জন আসামির মধ্যে শামীম মোল্যা, জুয়েল মোল্যা, নুরু মোল্যা, সোহাগ, আলামিন, মাফিজুর ও কোবাদসহ মোট সাত জন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বাবুল শেখ ২০২৩ সালে মারা গেছেন। মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র্যাব এর গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৪
এসজেএ/আরআইএস