দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচ জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে ১০ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩৩ জন আহত হয়েছেন এবং দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ি।
রোববার (৭ এপ্রিল) দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে এ তাণ্ডবলীলা ঘটে। ভোলার মনপুরা ও লালমোহন, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, রাঙামাটি ও ঝালকাঠিতে এ ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়।
পিরোজপুর
পিরোজপুরে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঝড় শুরু হয়। এ ঝড়ে গাছচাপায় এক নারী ও ঝড়ে উড়ে গিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন।
জেলার ওপর দিয়ে ১৫ মিনিট ঝড়ো গতিতে বাতাস বয়ে যায়। এতে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শত শত গাছ উপরে পড়ে কয়েকশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পৌরসভার প্রায় সব সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে পিরোজপুরের সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।
জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার রমজান আলী জানান, এ ঝড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত ১২ থেকে ১৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ভোলা
ভোলার মনপুরা ও লালমোহনে দুপুরের দিকে আকস্মিক ঝড় শুরু হয়। এতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় নিজ ঘরে চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতেও একজন মারা গেছেন।
মনপুরার দুপুর ১২টা দিকে হওয় ঝড়ের তাণ্ডবে দাসের এলাকায় ছয় জেলেসহ একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। যাত্রীদের সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও ট্রলারটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানিয়েছেন, নিহতের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত তিন উপজেলায় ১৬ টন চাল তাৎক্ষণিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর বাউফলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া ৩৫ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে দুইজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে বাউফলে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতসহ ঝড় হয়েছে। এতে তেতুলিয়া নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে দুই জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোণিত কুমার গাইন হতাহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধার ও অনুসন্ধানে কাজ চলছে।
বাগেরহাট
বাগেরহাটে ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ ও বিলবোর্ড পড়ে একজন নিহত ও ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১০ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ঝড়ে অন্তত দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, কচুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আকস্মিক ঝড়ে বেশকিছু ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ক্ষতিপূরণ নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটি
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ধনুছড়ি পাড়া গ্রামে বজ্রপাতে সাজেউ খিয়াং (৪৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাজেউ ওই গ্রামের অংসাউ খিয়াংয়ের ছেলে।
জানা গেছে, বিকেলে বাড়ির সামনে কাজ করার সময় বৃষ্টি শুরু হলে নিজ ঘরে আশ্রয় নেন সাজেউ। এ সময় বজ্রপাতে ঘরে ভেতরেই তার মৃত্যু হয়।
রাজস্থলী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝালকাঠি
ঝালকাঠির দুই উপজেলায় ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার শেখেরহাট, পোনাবালিয়া ইউনিয়ন এবং কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৪
এসএএইচ/এসআরএস