ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈশ্বরদীতে ঢাক ঢোলের বাজনার সঙ্গে লাঠিখেলা 

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
ঈশ্বরদীতে ঢাক ঢোলের বাজনার সঙ্গে লাঠিখেলা 

পাবনা (ঈশ্বরদী): ঢাক ঢোলের বাজনার তালে তালে লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা।

 

এমন দৃশ্য দেখে আনন্দে ফেটে পড়ছেন দর্শকরা। আর এ উৎসবকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে বিরাজ করছিল আনন্দের আমেজ। একইসঙ্গে দর্শক হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছিল লাঠিয়ালদের।  

এ যেন আবহমান বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলন। লাঠিখেলা প্রদর্শন করেন সলিমপুর ইউনিয়নের গ্রাম্য পুলিশ সদস্য নবাব আলীর নেতৃত্বধীন লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা।  

রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের মাঠে এ লাঠিখেলার আয়োজন করেন ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন।  

যা দেখতে আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তরুণ-শিশু ও বৃদ্ধদের লাঠির কসরত দেখে সবাই মুগ্ধ হন।  

তার আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ এমপি। পরে লাঠিয়াল বাহিনীর খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচিত ও কুশল বিনিময় করেন প্রধান অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।  

উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসিন কবীরের সভাপতিত্বে একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনে উপস্থিত ছিলেন- ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খাঁন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আতিয়া ফেরদৌস কাঁকলি, পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর-মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুস্তফা চান্না মণ্ডল, ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ প্রমুখ।

সলিমপুর লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বাংলানিউজকে জানান, বাংলার ঐহিত্যবাহী লাঠিখেলা এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। আমরা চেষ্টা করছি এটা ধরে রাখার জন্য। এটা কোনো খেলা না, খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার কৌশল মাত্র। অনেক সময় বিপদের সম্মুখীন হলে খালি হাতে বেঁচে আসা সম্ভব। তাছাড়া লাঠিখেলা শারীরিক কসরত ও ব্যায়াম কিন্তু।  

সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা বাংলানিউজকে জানান, পুরোনা ঐহিত্যকে ধরে রাখতে বাংলা নববর্ষে সলিমপুর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ঐহিত্যবাহী পুরোনো সংস্কৃতি ' লাঠিখেলার আয়োজন রাখা হয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসিন কবীর বাংলানিউজকে জানান, আধুনিক সভ্যতার ভিড়ে লাঠিখেলা এখন বিলুপ্তির পথে। আমরা চেয়েছি আধুনিক সভ্যতার যুগে বাংলা নববর্ষে পুরোনা ঐতিহ্য আমাদের মাঝে অটুট থাকুক। আমরা গ্রামীন বাংলার ঐতিহ্যগুলো ধরে রাখতে চাই। আমরা চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ নতুন প্রজন্ম আমাদের পুরোনো ঐতিহ্য সম্পর্কে জানুক, একই সঙ্গে আজকের তরুণ প্রজন্মকে পুরোনো ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন বছরের শুরুতে মনে রাখতে এবং শহরের  মানুষকে একটু বিনোদন দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি।  


পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ এমপি বাংলানিউজকে জানান, একসময় লাঠিখেলা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের খুব জনপ্রিয় একটি খেলা। ছোটবেলা থেকে দেখেছি এ অঞ্চলের গ্রাম বাংলার মানুষরা, তাদের যেকোনো উৎসবে মানুষকে বিনোদন ও আনন্দ দিতে লাঠিখেলার আয়োজন করতো। লাঠিখেলা এখন আর সচরাচর তেমন চোখে পড়ে না।  

গালিবুর রহমান শরীফ এমপি আরও বলেন, আমি সম্পূর্ণ খেলাটি আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছি, আমি মুগ্ধ হয়েছি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখতে হবে, এবং আজকের তরুণ প্রজন্মকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে হবে। সবার দায়িত্ব এটা। এছাড়াও আমি আমার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে আমার পক্ষ থেকে গ্রাম বাংলার ঐহিত্য সংস্কৃতি ধরে রাখতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা আমি করব।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।