নাটোর: অবশেষে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক মো. লুৎফুল হাবিব রুবেল।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ শেখের কাছে প্রার্থী লুৎফুর হাবীব রুবেলের পক্ষে প্রত্যাহারপত্রটি জমা দেন সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন।
এর আগে এক ভিডিও বার্তায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি। আর গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে ফোনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এছাড়া শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভা থেকেও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীবকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন নেতারা। তা না হলে তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তারা।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে দাখিলকৃত প্রত্যাহার পত্রে বলা হয়, আমি মো. লুৎফুল হাবীব, সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। কিন্তু ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কারণে আমার নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমার জমাকৃত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নপত্রটি প্রত্যাহার করে আমাকে এ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে মর্জি হয়।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন রুবেলকে তলব করায় বিকেল ৪টায় নির্বাচন কমিশনে হাজিরা দিতে রুবেল ঢাকায় রয়েছেন। তাই লুৎফুল হাবিব রুবেলের মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য তার পক্ষ থেকে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন প্রত্যাহারপত্রটি জমা দেন।
এসময় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবেদনপত্র গ্রহণ করে তা নির্বাচন কমিশনে পাঠান।
এর আগে সকালে ভিডিও বার্তায় লুৎফুল হাবিব রুবেল বলেন, সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবেন না। এ ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি ২০০২ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে রয়েছি। ২০০৫ সালে সিংড়া গোল-ই আফরোজ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছি। গত ৩ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করি। পর পর তিন বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আর গত ৮ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করি। এরপর থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন মহল সক্রিয়।
নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আব্দুল লতিফ শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, লুৎফুল হাবিব রুবেলের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনে ( ইসি) পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এ সময় তারা জরুরি প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে সেখান থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত প্রথমে দেলোয়ারের লোক আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন অফিস থেকে নেমে এলে তাকেও একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে নেওয়া হয়। গাড়িতে মধ্যে দেলোয়ারকে মারধর করা হয়।
পরে বিকেলে দেলোয়ার হোসেনকে পিটিয়ে তার বাড়ির সামনে (সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) ফেলে দিয়ে চলে যান তারা। চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করে যে গাড়িতে তোলা হয়, সেটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফুল হাবীব রুবেলের। পরে আহত দেলোয়ার হোসেনের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৪
এসআই