নড়াইল: নড়াইলে টানা তীব্র তাপদাহে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন কৃষকরা। মাঠে পাকা ধান অথচ কাটার ধুম নেই।
তীব্র তাপদাহে কৃষি শ্রমিকও মিলছে না। স্থানীয় কৃষক সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কাজ করছে। তাদের পারিশ্রমিক ৫-৬শ টাকা। বাইরে থেকে শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের তিন বেলা খাওয়াসহ দিনে ৮শ টাকা দিতে হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলায় ১ লাথ ৩৮ হাজার ৯৭০টি কৃষি পরিবার আছে। এ বছর জেলায় ৫০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২২ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) সদর ও কালিয়া উপজেলার আটঘরিয়া, বাহিরগ্রাম, মুলিয়া, কোড়গ্রাম আর কাড়ার বিল ঘুরে দেখা যায়, মাঠে পাকা ধান পড়ে আছে। কোথাও আবার অর্ধেক জমির ধান কেটে মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে বিকেলে রোদ পড়ে গেলে তা আঁটি বেঁধে ওঠানো হবে।
কালিয়া উপজেলার আটলিয়া গ্রামের কৃষক মাহাবুর বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না তাই এই গরমে মাঠে ধান কাটতে নেমেছি। গরমে শরীরের ঘাম বের হয়ে আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। ঝড় বৃষ্টি এসে গেলে তো মাঠের ধান আর ঘরে তুলতে পারবো না।
কথা হয় মিল্লাত, জামাল, আজাদসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। ফজরের নামাজের পর ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ধান কাটতে ক্ষেতে নেমেছেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত ধান কেটে মাঠে রেখে বিশ্রামে যাচ্ছেন তারা। বিকেল ৪টার পরে এসে বিছালি বেঁধে রাখবেন। দৈনিক যে কাজ করার কথা তার ৫০ ভাগও করতে পারছেন না। সকালের পরেও সন্ধ্যায় কাজ করে গৃহস্থকে পুষিয়ে দেওয়া লাগছে।
টানা গরম আর রোদ উপেক্ষা করে পাকা ধান কাটছেন কৃষক। গরমে আধা ঘণ্টার বেশি রৌদ্রে কাজ করতে পারছেন না তারা। একটু বিশ্রাম নিয়ে ঘর্মাক্ত দেহে আবার মাঠে নামছেন। অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক কাজ করতে পারছেন। সুস্থতার কথা চিন্তা না করে বৃষ্টির ভয়ে ধান কাটছেন। আটঘরিয়া বটগাছের তলে বিশ্রামে কৃষক গৌতম সরকার। বাড়ি থেকে স্ত্রী দৌড়ে পানির জগ নিয়ে এলেন। ঢকঢক করে পানি খেয়ে গায়ের ঘাম মুছতে শুরু করলেন। ক্লান্ত কৃষকের কাজ তখনও শেষ হয়নি।
বলেন, মাঠ থেকে ধান কেটে ঘোড়ার গাড়িতে উঠিয়ে আসলাম, মাঠের মধ্যে মাড়াই করবো। এরপর বিছালি বাঁধতে হবে। যে গরম তাতে অনেক কৃষক হিটেই মারা যাবে। কয়দিন পরে যখন বৃষ্টি আর গরম এক সঙ্গে হবে তখন শুনবেন কৃষকই মারা যাচ্ছে।
সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আসাদ-উজ্জ-জামান মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, এই গরমে কৃষকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো হিট স্ট্রোক হওয়া। তবে অবশ্যই মাথায় ছাতা বা মাথাল থাকতে হবে। আর কিছুক্ষণ পরপর পানি খেতে হবে এবং চোখে মুখে পানি ছেটাতে হবে।
নড়াইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আশেক পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ২০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। প্রচণ্ড গরমে কৃষকের ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে এটা ঠিক, তবে এই রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া তাদের কাম্য। আমরা আশঙ্কা করছি যেন ঝড় বৃষ্টির আগেই ধান কাটা শেষ হয়। যাদের হারভেস্টার মেশিন আছে তা দিয়ে ধান দ্রুত কাটার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
আরএ